সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে মরিয়া ইউক্রেন। আর এটাই অন্যতম প্রধান কারণ রাশিয়ার সঙ্গে কিয়েভের যুদ্ধ শুরু হওয়ার। তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ইতি টানতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা। ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও সংঘাত থামাতে রাজি। কিন্তু তিনি একের পর এক শর্ত দিয়ে যাচ্ছেন। যার মধ্যে তাঁর অন্যতম শর্ত, ইউক্রেন কোনওদিন ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না। কিন্তু পুতিনের দাবি ইউক্রেন আদৌ মানবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সাফ বলে দিয়েছেন, তাঁর সমস্ত কথা শুনতে হবে। রাশিয়ার হাতে জমি তুলে দিয়ে তিনি মাথানত করবেন না।
সম্প্রতি সৌদি আরবে বৈঠক হয়েছে ইউক্রেন ও আমেরিকার মধ্যে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানেই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানান তিনি। রাজি হয়েছেন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতেও। জেলেনস্কির থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই তড়িঘড়ি মস্কোয় মার্কিন আধিকারিকদের পাঠান ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তাঁর দূত স্টিভ উইটকফ কথা বলেন পুতিনের সঙ্গে। আলোচনা সদর্থক হলেও চারটি শর্ত রেখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
কী সেই শর্ত? জানা গিয়েছে, এনিয়ে রাশিয়ার উপবিদেশমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া যাবে না। যেকোনও শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে হবে। ইউক্রেনের যে জমি রাশিয়ার দখল রয়েছে, সেগুলোর উপর রাশিয়ার অধিকারই কায়েম থাকবে। ইউক্রেনে অন্য দেশের সেনা প্রবেশ করবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এই চারটে বিষয়ে গ্যারান্টি চান পুতিন। ট্রাম্প যদি এই শর্ত মেনে নেন তাহলেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাবেন পুতিন। তার আগে নয়। কিন্তু ইউক্রেন এই শর্তগুলো মানবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমি দুনিয়ার একাধিক দেশ ইউক্রেনকে সাহায্য করেছে। যুদ্ধাস্ত্র থেকে শুরু করে ত্রাণ, সমস্ত দিক থেকেই ইউক্রেনের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা-সহ একাধিক রাষ্ট্র। এতেই রাশিয়ার দাবি ছিল, বকলমে ন্যাটোর সঙ্গেই লড়তে হচ্ছে তাদের। পুতিন মনে করেন, যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র সাহায্য পাঠিয়ে লড়াই জিইয়ে রাখছে পশ্চিমি দুনিয়া। ইউক্রেনের আড়ালে ন্যাটোর শক্তির সঙ্গেই লড়ছে রুশ ফৌজ। পুতিনের দাবি, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। আর এটা তিনি কোনওভাবেই হতে দেবেন না। এদিকে, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য মরিয়া জেলেনস্কিও। তিনি মনে করেন দেশের নিরাপত্তার জন্য এটা প্রয়োজন।
এই মুহূর্তে তুমুল লড়াই চলছে রাশিয়ার কার্স্ক অঞ্চলে। একে অপরকে একচুল জমিও ছাড়তে নারাজ কিয়েভ আর মস্কো। কয়েকদিন আগেই পুতিনকে বার্তা দিয়ে ট্রাম্প অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তিনি যেন ইউক্রেনীয় সেনার প্রাণরক্ষা করেন। এই প্রসঙ্গেই রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “কার্স্কে ইউক্রেনের সেনাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাহলে আমরা কথা দিচ্ছি, তাঁদের প্রাণরক্ষা করব।” আর এই এতেই জেলেনস্কির অভিযোগ, এভাবেই যুদ্ধবিরতির চুক্তি প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ফলে শর্ত পালটা শর্ত চাপিয়ে যুযুধান দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কীভাবে যুদ্ধ থামাতে সহমত হবেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.