সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিষ গ্যাস হামলায় নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করায় সিরিয়াকে ‘শিক্ষা’ দিতে লাগাতার সামরিক অভিযান শুরু করেছে আমেরিকা৷ সিরিয়ার স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে নতজানু করতে লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ নির্দেশ মেনে পত্রপাঠ আসাদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে মার্কিন সেনা৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন মার্কিন রণতরী থেকে দফায় দফায় ৫৯টি টোমাহক ত্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় সিরিয়ার শায়রত বিমানঘাঁটিতে৷
তবে আমেরিকাকে পাল্টা হুমকি দিয়ে আসাদ বলেছেন, “টোমাহক ছুড়ে আমেরিকা একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন মূর্খের মতো কাজ করেছে৷ সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীকে৷ আমেরিকা যেন মনে রাখে সিরিয়া ইরাক বা আফগানিস্তান নয়৷” হামলার পরই আসাদকে বাঁচাতে আসরে নামে রাশিয়া ও ইরান৷ শিয়া মতাবলম্বী আসাদকে বাঁচাতে আমেরিকার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের হুমকি ছুড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শিয়া মুসলিম রাষ্ট্র ইরান৷ ইরান মদতপুষ্ট হিজবুল্লা জঙ্গি গোষ্ঠী, লেবানন এবং রাশিয়া সরাসরি আমেরিকার বিরুদ্ধে ‘অনিবার্য সংঘাত’-এ যাওয়ার চরম হুমকি দিয়েছে৷ ক্রেমলিনের হুঁশিয়ারি, “এখনই সংযত হোক আমেরিকা৷ না হলে যে কোনও খারাপ কিছু মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরি থাকুক৷” রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির স্যাফরনকভের বিবৃতি, মার্কিন পদক্ষেপে রাশিয়া অত্যন্ত ক্ষুব্ধ৷
পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি টিভি চ্যানেলের দাবি, হোমস প্রদেশের ওই বিমানঘাঁটিটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে৷ নিহত হয়েছেন কয়েকজন সিরীয় সেনা৷ ধ্বংস হয়েছে বেশ কয়েকটি মিগ যুদ্ধবিমান, নিশ্চিহ্ন হয়েছে এয়ারস্ট্রিপ, প্লেন হ্যাঙ্গার, কন্ট্রোল টাওয়ার, বোমার ভাণ্ডার৷ সিরিয়ার দাবি, তাদের মাত্র ছ’জন সেনা নিহত হয়েছেন৷ হামলার লক্ষ্য ছিল, রাশিয়া ও ইরানের মদতপুষ্ট সিরিয়ার বিমানবাহিনীকে অকেজো ও দুর্বল করে দেওয়া৷ কারণ ওই বিমানঘাঁটি থেকেই মিগ যুদ্ধবিমানগুলি রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বিদ্রোহীদের ইদলিব প্রদেশের খান শেখুঁ এলাকায়৷ কিন্তু বিদ্রোহী ঘাঁটির বদলে বিষ গ্যাস ভর্তি বোমা আছড়ে পড়ে শরণার্থী শিবিরে৷ সেই রাসায়নিক অস্ত্র তথা সারিন নামে এক ভয়াবহ বিষ গ্যাসের হামলায় মৃত্যু হয় ৭০ জন নিরীহ নাগরিকের৷ মৃতদের মধ্যে ২০ জনই শিশু৷ একই পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে ২২ জন মারা গিয়েছেন৷ মার্কিন সামরিক সদর দফতর পেন্টাগনের দাবি, সিরিয়ার বিমানবাহিনী ফের যাতে গোপনে বিষ গ্যাস নিয়ে হামলা চালাতে না পারে সেজন্যই টার্গেট করে টোমাহক দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বিমানঘাঁটি৷ পেন্টাগনের মুখপাত্র জেভ ডেভিস জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে, রাষ্ট্রসংঘের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বর্বরতার সঙ্গে সিরিয়া বিষ গ্যাস নিয়ে হামলা চালিয়েছে৷ সিরীয় বিমানবাহিনী সংযত না হলে এর থেকেও বড় ধরনের হামলা চালাবে আমেরিকা৷
সূত্রের খবর, সিরিয়াকে থামাতে ও ‘শিক্ষা’ দিতে এখনই একটা কিছু করার জন্য তিনি ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ অল্যাদঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র সঙ্গে কথা বলেন৷ এরপরই একতরফা হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়৷ ইতিমধ্যে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী’ হিসাবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় তোলার দাবি করেছে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, আমেরিকা-সহ আরব দুনিয়ার বেশিরভাগ মুসলিম দেশ৷ আসাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন স্বয়ং রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গিতেরেস৷
হামলার আগে ফ্লোরিডায় তাঁর ভাষণে ট্রাম্প সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে মন্তব্য করেন৷ আসাদই সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য রাসায়নিক হামলা চালিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প৷ তাঁর বক্তব্য, “বিশ্বের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাষ্ট্রকে বলছি, আসুন আমরা একসঙ্গে সিরিয়ায় রক্তপাত রুখে দিই৷ সবরকম জঙ্গিদের শেষ করে দিই৷ যতক্ষণ আমেরিকা ন্যায্য বিচার চাইবে, শান্তি বজায় থাকবে৷” বিষ গ্যাস কাণ্ডে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তুরস্ক এবং ফ্রান্সও৷ ফরাসি বিদেশমন্ত্রী জ্যাঁ মার্ক আয়রাউল বৃহস্পতিবার বলেছেন, “আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি এমন একটা দিন শীঘ্রই আসবে যেদিন আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকবেন আসাদ৷ নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে বিষ গ্যাস প্রয়োগ করার জন্য আসাদের বিরুদ্ধে রায় দেবে আদালত৷ সেদিন চরম শাস্তি পাবেন আসাদ৷ কেউ তাঁকে বাঁচাতে পারবে না৷”
যেমন কেউ বাঁচাতে পারেনি সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট মিলোসেভিচকে৷ যুগোস্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য চরম শাস্তি হয়েছিল স্লোবোদান মিলোসেভিচের৷ প্যারিসের সি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আয়রাউল জানান, উত্তর সিরিয়ার খান শেখুঁ এলাকায় সিরিয়ার বিমানবাহিনীই গ্যাস হামলা চালিয়েছিল৷ বিদ্রোহীদের দমন করার নামে বিষ বোমা ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে অন্তত ৯০ জনকে৷ এই কাপুরুষোচিত আক্রমণের বিচার হওয়া দরকার৷ তিনি বলেন, আসাদকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ঘোষণা করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফ্রান্সও৷ আসাদকে রক্ষা করতে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দিতে পারে রাশিয়া৷ তবে উদ্যোগে কোনও ঘাটতি হবে না৷ সিরিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির কথাও ভাবছে ফ্রান্স৷ তবে এ ব্যাপারে সব দিক ভেবেই কোনও পদক্ষেপ করা হবে৷
যেখানে টোমাহক ত্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালানো হয়েছে তার খুব কাছেই রাশিয়ার সেনা শিবির রয়েছে৷ তাদের হামলার আগাম খবর দেওয়ায় হাজার দুয়েক রুশ সেনা নিরাপদ জায়গায় সরে যান৷ ইদলিবে বিষ গ্যাসের হামলার ভয়াবহ ছবি সংবাদপত্রে দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ মার্কিন মিডিয়ায় তিনি বলেন, মৃত শিশুদের চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে৷ মুখে গ্যাঁজলা ও রক্ত উঠে ছটফট করতে করতে মারা গিয়েছে অসহায় বাচ্চারা৷ এজন্য আসাদকে মূল্য চোকাতে হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.