সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ বছরের কূটনৈতিক সমীকরণ বদলে দিল ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন আমেরিকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাষ্ট্রসংঘের ভোটাভুটিতে আমেরিকা ভোট দিল রাশিয়ার পক্ষে। আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়াকে সমর্থন আরও ১৬টি দেশের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একে অপরের শত্রুদেশে পরিণত হওয়া আমেরিকা ও রাশিয়ার এই কাছাকাছি আসার ঘটনা বেনজির বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। পাশাপাশি এই ঘটনায় চাপ আরও বাড়ল জেলেনস্কির।
তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর ঘটনায় ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রসংঘে কড়া সুরে রাশিয়ার সমালোচনা করেছিল আমেরিকা। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে অস্ত্র যুগিয়ে গিয়েছিল তৎকালীন বাইডেন সরকার। আমেরিকার বলে বলিয়ান হয়ে এত বছর ধরে রাশিয়ার সেনাকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হন জেলেনস্কি। তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। যুদ্ধ থামাতে তৎপর হয়েছেন তিনি। এমনকি জেলেনস্কিকে ‘অযোগ্য’, ‘একনায়ক’ বলে তোপ দেগেছেন।
এহেন পরিস্থিতির মাঝেই যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়ে এবং রাশিয়ার তরফে দখল করে রাখা জমি ফেরতের দাবিতে রাষ্ট্রসংঘে প্রস্তাব পেশ করেছিল ইউক্রেন। ১৯৩ সদস্যের রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় এই ড্রাফট রেজোলিউশন-এর শিরোনাম ছিল, ‘অ্যাডভান্সিং অ্যা কমপ্রিহেন্সিভ, জাস্ট এন্ড লাস্টিং পিস ইন ইউক্রেন’। এই প্রস্তাবের ভোটাভুটিতেই ভিন্ন রূপে দেখা গেল আমেরিকাকে। ইউক্রেনের পেশ করা এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিল ওয়াশিংটন। অর্থাৎ ভোটাভুটিতে মস্কোর পাশে দাঁড়াল তারা। ইউক্রেন ও ইউরোপিয়ান দেশগুলির পেশ করা এই রেজোলিউশনের পক্ষে ভোট পড়েছে ৯৩টি, বিপক্ষে অর্থাৎ রাশিয়াকে সমর্থন করে ভোট দিয়েছে ১৮টি দেশ। ৬৫টি দেশ ভোটাভুটি থেকে বিরত ছিল। তার মধ্যে রয়েছে ভারত ও চিনও।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রসংঘে আমেরিকার এই নীতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আসলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে থামাতে মধ্যস্তাকারীর ভূমিকায় নেমেছে আমেরিকা। এতদিন ধরে চলা যুদ্ধে আমেরিকার যে অর্থ ব্যয় হয়েছে সেটাও ইউক্রেনের থেকে সুদে আসলে পুষিয়ে নিতে চান ট্রাম্প। এর জন্য ইউক্রেনের অর্ধেক খনিজ সম্পদের নিজেদের অধিকার দাবি করেছে হোয়াইট হাউস। তাতে গররাজি নন জেলেনস্কি। তিনি পালটা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ভার আমেরিকাকে নিতে হবে। ইউক্রেনকে ন্যাটোর অংশ করারও প্রস্তাব দিয়েছেন জেলেনস্কি তাহলেই এই প্রস্তাবে রাজি হবেন তিনি। কূটনৈতিক মহলের দাবি, যুদ্ধ যখন সন্ধির পর্যায়ে এসেছে সেখানে আমেরিকার স্বার্থকে ক্ষুন্ন করে ইউক্রেনের রাষ্ট্রসংঘে যাওয়ায় নারাজ ওয়াশিংটন। যার জেরেই বিশ্বমঞ্চে ইউক্রেন বিরোধী ভূমিকা নিতে দেখা গেল ট্রাম্পের আমেরিকাকে। অবশ্য রিয়াধে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বার্তালাপের পরই দুই দেশের পুরনো নীতিতে বড় বদলের আভাস পাওয়া গিয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.