সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্প না জো বিডেন। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘সাদা বাড়ি’র দখল নেবে কে, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই বহু প্রতীক্ষিত মঙ্গলবার বা ৩ নভেম্বর ঘিরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা। তবে ভারতের মতোই গণতান্ত্রিক দেশ হলেও সে দেশের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিস্তর ফারাক রয়েছে। তাই এক ঝলকে জেনে নিন মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের খুঁটিনাটি তথ্য।
আমেরিকায় ভোটদান কখন শুরু ও শেষ হয়?
ভারতে যেমন নির্বাচন কমিশন ভোট করায়, তেমন কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা আমেরিকায় নেই। ফলে ভোট শুরু ও শেষ হওয়ার সিদ্ধান্ত একেক রাজ্যে একেক রকম হয়। তবে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি সকাল ৬টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এবং খুব বেশি দেরি হলেও তা শেষ হয় রাত ৯টায়। অর্থাৎ ৩ নভেম্বর রাত ন’টায় আমেরিকায় ভোটদান পর্ব শেষ হবে। তবে ‘আর্লি ভোটিং’ গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। করোনা আবহে সোমবার পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৯.৬ কোটি মার্কিন নাগরিক।
কখন শুরু হবে ভোটগণনা?
এখানে ভারতের সঙ্গে একটা বিশাল তফাৎ রয়েছে আমেরিকার। নির্বাচন কমিশনের মতো কোনও ফেডারেল সংস্থা না থাকায় আমেরিকার প্রত্যেকটি রাজ্য নিজের আইনমাফিক নির্বাচন সম্পন্ন করে। ফলে ভোটগণনার নিয়মও হয় ভিন্ন। আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের বেশিরভাগই ভোটিং মেশিন ব্যবহারের অনুমতি দিলেও অধিকাংশ ভোটগ্রহণ হয় ব্যালট পেপারেই। তারপর শুরু হয় হস্তাক্ষর মেলানো, নথি খতিয়ে দেখা ও ব্যালটগুলিকে স্ক্যান করা ইত্যাদি। সমস্ত কিছু সঠিকভাবে খতিয়ে দেখে শুরু হয় ভোটগণনা। এক্ষেত্রে প্রতিটি রাজ্য নিজের মতো করে গণনার দিন ঠিক করে। উদ্ধাহরণস্বরূপ, অ্যারিজোনায় অক্টোবরের ৭ তারিখ থেকে মেল-ইন-ব্যালট অর্থাৎ ডাকযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। নভেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত চলবে ভোটদান। এদিকে, অক্টোবরের ২০ তারিখ থেকে অ্যারিজোনায় ভোটগণনা শুরু হয়ে গিয়েছে যা চলবে শেষদিন পর্যন্ত। ওহাইও রাজ্যে অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে গণনা প্রক্রিয়া। নভেম্বরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত ডাকযোগে ভোট নেওয়া হবে। তবে এই রাজ্যে নভেম্বরের ৩ তারিখ হবে চূড়ান্ত গণনা।
কখন জানা যাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন কে?
আমেরিকায় জনগণ পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে ইলেক্টরদের ভোট দেয়। ৫৩৮টি ইলেক্টরের মধ্যে যিনি বেশি ভোট পান তিনিই প্রেসিডেন্ট পদে বসেন। এক্ষেত্রে ভারতের মতো কোনও দলের কেন্দ্রভিত্তিক ভোট হয়না। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) না জো বিডেন (Joe Biden), আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবে তা সরাসরি ঠিক করেন ভোটাররা। তবে নভেম্বরের ৩ তারিখ ভোটদান শেষ হলেও চূড়ান্ত ফল আসতে কয়েকদিন দেরি হবে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডিসেম্বর পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এক্ষেত্রে যা সাধারণত হয়ে থাকে, তা হল ভোটের রাতে মার্কিন সংবাদমধ্যমগুলিতে মোটামুটি রাজ্যগুলির ফল ঘোষণা হয়ে যায়। যদিও সমস্ত সংখ্যা আসতে আরও দু’একদিন লেগে যায়। ফলে মোট ৫৩৮টা ইলেক্টরাল কলেজের মধ্যে ম্যাজিক ফিগার ২৭০ কোন প্রার্থী আগে ছুঁয়ে ফেলেছেন তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সেইমতো বিরোধী প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করে নেন। তারপর বাকি থাকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। কিন্তু এবার করোনা আবহে বিপুল সংখ্যায় মেল-ইন-ব্যালট জমা পড়ায় শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই প্রক্রিয়ায় কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প। তাই গণনা শেষ হলেও মামলা আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা হবে আদালতের নির্দেশের উপর ভিত্তি করে।
ভারত ও আমেরিকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কী তফাৎ?
ভারতের নির্বাচনী সিস্টেমে (Election) লোকসভা কেন্দ্রগুলি একক, আলাদা করে যে-প্রার্থী বেশি ভোট পাবে কোনও কেন্দ্রে, সেই জিতে নেবে সেই কেন্দ্র। উদাহরণ, পশ্চিমবঙ্গের ৪২টা আসন ভাগ হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে, বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব অনুসারে। কিন্তু মার্কিন মুলুকে নিয়ম আলাদা। এক্ষেত্রে, লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে যে দল সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, তারা রাজ্যের ৪২টা আসনেই জয়ী হবে। অর্থাৎ, আমেরিকায় নির্বাচন রাজ্যভিত্তিক, কেন্দ্রভিত্তিক নয়। সে-দেশে ভোটাররা porokhe ভোট দেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে। আর সেইসঙ্গে এক-একটা রাজ্য একসঙ্গে হয়ে ওঠে লাল বা নীল। ‘লাল’ হল রিপাবলিকান দলের রং, আর ‘নীল’ ডেমোক্র্যাটদের। মেইন বা নেব্রাস্কা– এই রাজ্য দু’টি অবশ্য ব্যতিক্রমী। এই রাজ্যগুলিকে আবার ভাগ করা হয়েছে একাধিক ভাগে, যার এক-এক ভাগ নিজেদের মতো করে লাল বা নীল হয়ে উঠতে পারে। সব মিলিয়ে দেশের মানচিত্রটা লাল-নীলের নকশা হয়ে ওঠে, রাজ্য ধরে ধরে। ৫৩৮ আসনের ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’-এ বিভিন্ন রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট আসন অবশ্য অনেকটাই তাদের জনসংখ্যার উপরে নির্ভরশীল। সেই বিচারে এক-এক রাজ্যের গুরুত্ব এক-এক রকমের। আমাদের যেমন সবচেয়ে বেশি লোকসভা আসন উত্তরপ্রদেশে, আমেরিকায় তেমনই ৫৫টি ইলেক্টোরাল আসন নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। তবে, পার্থক্য হল, ক্যালিফোর্নিয়ার ওই ৫৫টি আসন কোনও একটি দল পাবে একসঙ্গে। ওদিকে, আলাস্কা কিংবা ডেলাওয়্যারের মতো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট ৩টি করে। মোটের উপর কতটা লাল বা নীল হয়ে ওঠে অনিশ্চিত রাজ্য বা ‘সুইং স্টেট’গুলি, তার ভিত্তিতেই ঠিক হবে হোয়াইট হাউসের পরের চার বছরের মালিকানা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.