সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হোয়াইট হাউস দখল করেছেন জো বিডেন (ওল্ড জো)। চিল চিৎকার করেও শেষরক্ষা করতে পারেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এই নাটকীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দিকে টানটান হয়ে তাকিয়ে ছিল গোটা ভারত। এমনকী, যাঁরা নিজেদের এলাকার বিধায়ক বা সাংসদের নাম পর্যন্ত জানেন না, তাঁরাও রীতিমতো ট্রাম্প-বিডেন শিবিরে ভাগ হয়ে চায়ের দোকানে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন। এবার প্রশ্ন হল মার্কিন গদি বদলে খুব কি লাভবান হবে ভারত?
এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, মার্কিন রাজনীতির একটি নির্দিষ্ট ঘরানা আছে। আজ পর্যন্ত সেটি ভেঙে খুব বেশি পৃথক কাজ কিন্তু কোনও প্রেসিডেন্টই করেননি। তা তিনি ডেমোক্র্যাট ওবামাই হোন বা রিপাবলিকান ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে ‘তেলের লড়াই’ ও ভূ-রাজনৈতিক মঞ্চে প্রভাব বিস্তার করতে সন্ত্রাসদমনের নামে কাজ করলেও, পাকিস্তানের মতো দেশের সঙ্গে কাজ করেছেন ওবামা থেকে ট্রাম্প। ফলে বলাবাহুল্য, চিনকে রুখতে ডেমোক্র্যাটরা যতটা ভারতের উপর ভরসা করে ততটাই রিপাবলিকানদেরও করতে হয়। তবে হ্যা, এক্ষেত্রে বিডেন বলেছেন তিনি H1B ভিসা চালু করবেন। মার্কিন মুলুকে চাকরির আশায় বহু ভারতীয় এই ভিসার দিকে চাতকের মতো তাকিয়ে থাকেন। তবে করোনা আবহে আমেরিকায় বেকারত্ব বেড়েছে। তাই ট্রাম্পের ‘বিদেশি বহিষ্কার’ নীতি কিন্তু গ্রহণযোগ্য হয়েছে বহু মার্কিন নাগরিকদের কাছে। কারণ, কম টাকায় ভারতীয় বা চিনারা কাজ না করলে সেই চাকরিটুকু অন্তত তাঁদের জুটে যাবে। তাই এই কথা মাথায় রেখে বিডেন যে ভারতীয়দের উদ্দেশে লাল গালিচা বিছিয়ে দেবেন, এখনই তেমনটা ভাবার কারণ নেই।
এবার আসা যাক ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। বিশ্বে চিনা প্রভাব লাগাতার বাড়ছে। ‘আঙ্কেল স্যাম’কে কড়া চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে বেজিং। ফলে ভারতের সঙ্গে কিছুটা দহরম মহরম বেড়েছে আমেরিকার। তাছাড়া, মার্কিন অস্ত্রের বড় বাজার ভারত। তাই নয়াদিল্লিকে হাতে রাখলে আখেরে ফায়দা ওয়াশিংটনের। কিন্তু, আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমীকরণ দ্রুত পালটে যায়। ফলে প্রশ্ন উঠছে ভারত-চিন যুদ্ধ হলে আমেরিকা কি ফৌজ পাঠাবে? ভারতীয় নৌসেনার উন্নতিকল্পে আমেরিকা কি অনুদান দেবে? লাদাখের পাহাড়ে চক্কর কাটবে কি মার্কিন বায়ুসেনা? ভারতের জন্য মার্কিন বাজার খুলে দেবে আমেরিকা? লক্ষ লক্ষ ভারতীয় অভিবাসীকে কি অভ্যর্থনা জানানো হবে? এই প্রশ্নগুলি মার্কিন রাজনীতির ঘরানার পরিচয় দিয়ে দেয়। গত চার বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন কোনও চুক্তি করেননি, যা স্রোতের বাইরে বলা চলে। স্বাভাবিক নিয়মেই যা ঘটার ঘটেছে। এবং সেটাই স্বাভাবিক। হ্যা, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলে চাপ বাড়ায়নি ওয়াশিংটন। রাষ্ট্রসংঘে চিন ও পাকিস্তানের ভারত বিরোধী প্রস্তাব রুখে দিয়েছে আমেরিকা। সম্প্রতি, ভারত-মার্কিন ২+২ বৈঠকে মার্কিন সামরিক উপগ্রহের চিত্র ভারতকে দিতে রাজি হয়েছে আমেরিকা। কিন্তু তাতে কি! বিরোধী আসনে বসে কমলা হ্যারিস যেভাবে কাশ্মীর নিয়ে নয়াদিল্লিকে তুলোধোনা করেছেন, এবার মসনদে বসে কি তেমনটা করতে পারবেন? উত্তর হচ্ছে, না। কারণ, বিরোধী হয়ে যা করা যায়, তা শাসক হয়ে করা যায়না। এটা বিডেনও জানেন। কাশ্মীর নিয়ে অত্যাধিক চাপ বাড়ালে, নয়াদিল্লি রাশিয়ার আরও কাছে চলে যাবে। এবং যে সম্পর্কের ভিত ওবামার আমলে তৈরি হয়েছিল তা নষ্ট হয়ে যাবে। বলে রাখা ভাল, ভারতের জাতীয়বাদী সরকার আমেরিকা-চিন সংঘাতে নিজেদের একটি পক্ষ হিসেবে দেখছে। জাপানে কোয়াড বৈঠক, মালাবার উপকূলে চার দেশ নৌ মহড়াকে সম্পর্কের উন্নতির সোপান হিসেবে দেখানো হচ্ছে। যদিও এই কোনও বৈঠকই নতুন কিছু নয়। নতুন নয় ২+২ বৈঠক।
এদিকে, ট্রাম্পের ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ নিয়ে ভারতে একাংশ দক্ষিণপন্থী মানুষ তাঁর ফ্যান হয়ে উঠেছিলেন। আবার ‘ইসলাম বিরোধী’ বলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফুসছিলেন সংখ্যালঘুদের একাংশ। তবে বলে রাখা ভাল, আমেরিকার নীতি কিন্তু সেই অর্থে ধর্ম বা বর্ণ নির্ভর নয়। ফলে ট্রাম্প গিয়ে বিডেন আসায় খুব একটা পরিবর্তন হবে না। মার্কিন অস্ত্রে নির্ভর করে ও হোয়াইট হাউসের দিকে তাকিয়ে চিনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার কোথা ভাবা বাতুলতা। আর সেটা মোদি সরকারও ভালই জানে। তাই, ‘নমস্তে ট্রাম্প’ থেকে ‘নমস্তে বিডেন’ অনুষ্ঠান হতে খুব বেশি দেরি হওয়ার কথা নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.