সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আমেরিকার মধ্যস্থতা প্রস্তাব নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নাটকীয় মোড়৷ সৌজন্যে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকা সফররত পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের পর সোমবার ট্রাম্প বলেন, ভারতও পাকিস্তান দুই দেশ চাইলে তিনি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা করতে তৈরি।
সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ইতিমধ্যে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে তাঁর ‘সাহায্য’ চেয়েছেন। আর মোদির সেই আরজিতে সাড়া দিয়েই তিনি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এরপরই ট্রাম্পের মন্তব্য খারিজ করে নজিরবিহীন কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত সরকার।
বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার এদিন রাতে এক বিবৃতিতে জানান, “আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য শুনেছি। স্পষ্ট জানাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কস্মিনকালেও এই রকম কোনও প্রস্তাব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেননি। তাছাড়া ভারতের নীতি খুব পুরনো ও সুস্পষ্ট। তা হল, পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোনও বিবদমান বিষয় বা ইস্যু দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হবে। সেখানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতার কোনও জায়গাই নেই। দ্বিপাক্ষিক যে কোনও বিষয় নিয়ে সিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণাপত্র মেনেই এগোবে ভারত ও পাকিস্তান। এর অন্যথা হবে না। এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে এখন যে ব্যাপারে আলোচনা সবচেয়ে জরুরি তা হল, সন্ত্রাসে মদত চিরতরে বন্ধ করা নিয়ে।” অর্থাৎ ভারত এদিন ঘুরিয়ে ট্রাম্পকে ‘মিথ্যেবাদী’র তকমাই দিল৷ রবীশ কুমার সাফ জানিয়েছেন, মোদি কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের ‘সালিশি’ কোনওদিনই চাননি।
রবীশ কুমার নিজের বিবৃতি দিয়ে প্রথমে টুইটও করেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এদিন ট্রাম্পের ‘কাশ্মীর’ সংক্রান্ত দাবি নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নয়াদিল্লি এবং আমেরিকায় মার্কিন দূতাবাসেও। কারণ অতীতের কংগ্রেস ও বিজেপি সরকারগুলির একটি স্পষ্ট নীতি ছিল যে, কাশ্মীর সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের উপস্থিত এবং মধ্যস্থতাকারী কিছুতেই বরদাস্ত করবে না ভারত। কয়েক দশক ধরে ভারতের স্পষ্ট অবস্থান, কাশ্মীর ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই এটা মেটাতে হবে। এমনকী দ্বিতীয় মোদি সরকারও এই নীতি নিয়েই পথচলা শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতি এবং পাকিস্তান নীতি আরও কঠোর – সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। পাকিস্তান সীমান্তপারের সন্ত্রাস বন্ধ না করলে ভারত কোনও আলোচনাতেই বসবে না। সেখানে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা বা সালিশি নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।
তাই কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প আগ বাড়িয়ে ইমরানের সামনে সোমবার রাতে যা দাবি করলেন তার বাস্তব ভিত্তি কতটুকু? কারণ বিচক্ষণ মোদি আদৌ কি কখনও ট্রাম্পের সাহায্য চেয়েছিলেন? কাশ্মীর নিয়ে মোদির কোনও বক্তব্য ট্রাম্প ভুল ব্যাখ্যা করছেন না তো? ভারতের কূটনৈতিক মহলের অনেকের প্রতিক্রিয়া হল, আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরানোর পর আফগানিস্তান এখন আমেরিকার ‘গলার কাঁটা’ হয়ে আছে। তালিবানের পাক সেনার মদতে ফের কবজা করে নিচ্ছে প্রায় গোটা আফগানিস্তানটাই। তাই আফগানিস্তানকে তালিবানের হাত থেকে বাঁচাতে হলে, আফগানিস্তানের সরকার নিরাপদে টিকিয়ে রাখতে হলে, আফগানিস্তানে আমেরিকার স্বার্থ বজায় রাখতে হলে পাকিস্তানকে ‘হাতে’ রাখতেই হবে। ফলে আফগানিস্তানে আমেরিকার স্বার্থ বজায় রাখার বিনিময়ে ট্রাম্প পাকিস্তানের ‘মন’ রাখলেন। অর্থাৎ পাকিস্তান গত কয়েক দশক ধরে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার জন্য জোর গলায় যে দাবি করে আসছিল, ট্রাম্প সেই দাবিকেই মান্যতা দিলেন। সেজন্যই কাশ্মীরে ‘সালিশি’র প্রস্তাব। অথচ দুঁদে মার্কিন কূটনীতিকরা খুব ভাল করেই জানেন, কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করা প্রায় অসম্ভব। কারণ, ভারত সেখানে কাউকে নাক গলাতে দেবে না। আর নয়াদিল্লি না চাইলে বিশ্বের কোনও শক্তি তাকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পারবে না। ফলে পাকিস্তানের স্বপ্ন ‘দুঃস্বপ্নই’ থেকে যাবে।
সূত্রের খবর, ওভাল অফিসে বসে এদিন ট্রাম্প কথা প্রসঙ্গে ইমরানকে বলেন, “যদি আমি আপনাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি তাহলে আমি নিজেই খুব খুশি হব। কারণ আমি একজন খুব ভাল মধ্যস্থতাকারী হতে পারব।” সঙ্গে সঙ্গে তা লুফে নেন ইমরান। সুত্রের আরও খবর, ইমরান নাকি জানিয়েছেন, “আমরা রাজি। আপনি চেষ্টা করুন। আমাদের দিক থেকে সবরকমের সহযোগিতা পাবেন।” ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বেশ কিছুক্ষণ ধরে বৈঠক চলে। কাশ্মীর ছাড়াও সন্ত্রাসবাদ, পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য, আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানো সহ একাধিক ইস্যুতে আলোচনা হয়। ইমরানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈয়াজ হামিদ। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইট করে বলেছেন, “এ বার কি ভারত ট্রাম্পকে মিথ্যেবাদী বলবে? নাকি স্বীকার করে নেবে যে কাশ্মীর সমস্যা মেটাতে পারছেন না মোদি? তাই তৃতীয় শক্তির সাহায্য চেয়েছেন তিনি?” কংগ্রেসের রণদীপ সুরজেওয়ালাও মোদি সরকারকে দায়ী করে বিবৃতি দেন। এরপরই ট্রাম্পের দাবিকে অসত্য বলে লম্বা বিবৃতি দেয় বিদেশমন্ত্রক।
Raveesh Kumar, MEA: We have seen US President Donald Trump’s remarks to the press that he is ready to mediate, if requested by India & Pakistan, on Kashmir issue. No such request has been made by PM Narendra Modi to US President. It has been India’s consistent position…1/2 pic.twitter.com/PGeRkBsNuA
— ANI (@ANI) July 22, 2019
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.