সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড়সড় ধাক্কা খেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ, হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর দখল নিল ডেমোক্র্যাটরা। উচ্চকক্ষ সেনেটে অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে রিপাবলিকানরা। আট বছর পর ডেমোক্র্যাটরা হাউসের দখল ফিরে পেল। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাজেট-অভিবাসন-কর-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতি ও প্রস্তাবে তারা বাধা দিতে পারবে। তদন্তও করতে পারবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যদিও আত্মবিশ্বাসী ট্রাম্প এই ফলের জন্য মার্কিন জনতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এবারের ভোটে রেকর্ড সংখ্যক (৯০ জন) মহিলা প্রার্থী, দুই মুসলিম মহিলা শরণার্থী প্রার্থী এবং দুই নেটিভ আমেরিকান মহিলা প্রার্থীর জয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২০-র প্রেসিডেন্ট ভোটে ট্রাম্প ফের লড়বেন কি না, স্পষ্ট নয়। কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচন তাঁর সাফল্য-ব্যর্থতার উপর গণভোট হিসাবেই চিহ্নিত হচ্ছে। সেই মাপকাঠিতে হাউসে গরিষ্ঠতা হারানো ট্রাম্পের পক্ষে বড় ধাক্কা।
[পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বাস পরিষেবা চালু করল চিন-পাকিস্তান]
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, ডেমোক্র্যাটরা বিরাট ব্যবধানে জিতবে। সেই প্রবণতা যে কিছুটা আটকানো গিয়েছে, সে জন্য ট্রাম্পকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন রিপাবলিকানরা। আরও একটা অদ্ভুত সমীকরণ চোখে পড়েছে। নজিরবিহীনভাবে এই ভোটে ৫০টি সভা করেছিলেন ট্রাম্প। তার মধ্যে গত দু’মাসেই ৩০টি। হাউসে ব্যাপক পরাজয় সত্ত্বেও টেক্সাস, ইন্ডিয়ানা, মিসৌরি, ফ্লোরিডা, নর্থ ডাকোটা-সহ সেনেট ও গভর্নর নির্বাচনে যেখানে ট্রাম্প প্রচার করেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই জিতেছেন রিপাবলিকান প্রার্থীরা। সেটাকেই নিজের সাফল্য বলে তুলে ধরতে চাইছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, মধ্যবর্তী নির্বাচনে গত ১০৫ বছরে মাত্র পাঁচবার শাসক দল সেনেট দখলে রাখতে পেরেছে। কানসাস, ইলিনয়, মিশিগান, মিনেসোটার মতো কয়েকটা হাইপ্রোফাইল গভর্নর পদেও ডেমোক্র্যাটরা জিতেছেন।
হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর দখল পেতে প্রয়োজন ছিল ২১৮টি আসন। ডেমোক্র্যাটরা নিজেদের ঝুলিতে থাকা আসনের চেয়েও ২৬টি বাড়তি আসন নিয়ে দুপুরের মধ্যেই ২১৯টিতে জিতে যায়। ৫০.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা। রিপাবলিকানরা জয়ী হয়েছে ১৯৩টি আসনে। তাদের প্রাপ্ত ভোট ৪৪.৪ শতাংশ। ৫৪টি আসন নিয়ে রিপাবলিকানরা সেনেটে গরিষ্ঠতা পেয়েছে। সেনেট ভোটে নিজেদের দখলে থাকা দু’টি আসন হারিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি প্রদেশে গভর্নর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা দারুণ ফল করেছে। ২২টি প্রদেশে গভর্নর পদে জিতেছেন তাদের প্রার্থীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকানদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন সাতটি আসন।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল রিপাবলিকানরা। তাই মধ্যবর্তী নির্বাচন ডেমোক্র্যাটদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর এ বার আয়কর রিটার্ন জমা-সহ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের তদন্ত শুরু করাতে পারে তারা। তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ, ট্রাম্পের স্বার্থ সংঘাত নিয়েও। মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল গাঁথার পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে পারে ট্রাম্পের। তবে বিরোধীরা তাঁর কাজে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ট্রাম্প সহানুভূতি আদায় করতে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
সবচেয়ে কৌতূহল, ট্রাম্পকে ইমপিচ করা হবে কি না, তা নিয়েই। রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তে মারাত্মক কোনও তথ্য ফাঁস হলে ডেমোক্র্যাটরা তা নিয়ে তৎপর হবেই। তার আগে আপাতত এ বিষয়ে খুব একটা হইচই করতে চাইছে না তারা। তবে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিক তিক্ততা ও তরজা যে আরও উচ্চগ্রামে যাবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের খুব একটা দ্বিমত নেই।
[চাবাহার নিয়ে সুর নরম আমেরিকার, স্বস্তিতে ভারত]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.