ফাইল ফটো
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইসলামিক স্টেটের দক্ষিণ এশিয়া শাখা আইসিল(খোরাসান)-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল রাষ্ট্রসংঘ। মঙ্গলবার রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত ১২৬৭ নম্বর কমিটি এই ঘোষণা করেছে। জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা জঙ্গি মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করার ১৫ দিনের মধ্যেই আইএসআইএস-এর দক্ষিণ এশিয়া শাখাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল নিরাপত্তা পরিষদ।
১২৬৭ নম্বর আল কায়দা নিষিদ্ধকরণ কমিটি জানিয়েছে, “ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত(আইসিল)-খোরাসান’-এ কাজকর্ম সবরকমভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ-সহ দক্ষিণ এশিয়াকে খোরাসান হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে ইসলামিক স্টেট। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বজুড়ে আইসিল-খোরাসানের যাবতীয় সম্পত্তি, অস্ত্র ও রসদের জোগান বাজেয়াপ্ত করা হল। সংগঠনটির জঙ্গিদের যাতায়াতের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল।”
আমেরিকা-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ গবেষক সংস্থা ডিফেন্স অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) জানিয়েছে, ২০১৪ সালেই তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) সংগঠনের নেতা হাফিজ সইদ খানকে খোরাসান সংগঠনের সুপ্রিমো বা সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নিযুক্ত করেছিল ইসলামিক স্টেট। এর অধীনে খোরাসানের এলাকা বাংলা-র দায়িত্ব পেয়েছে ইসলামিক স্টেট কমান্ডার তথা আমির। এই আমির পদাধিকারী নয়া জঙ্গি নেতার নাম, ‘আবু মহম্মদ আল বেঙ্গলি।’ এই নয়া আমির গোটা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় খিলাফত (ইসলামের সাম্রাজ্য) প্রতিষ্ঠা করতে এবং বিধর্মীদের হত্যা করতে জেহাদ চালাবে। এরা নিজেদের আমাক নিউজ এজেন্সি এবং দাবিক ম্যাগাজিনে হাফিজ সইদ খান এবং আবু মহম্মদ আল বেঙ্গলির নাম উল্লেখ করে তাদের দায়িত্ব নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে।
টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে তারা আরবি এবং বাংলা ভাষায় জানায়, ‘আমরা আসছি’। এরপরই অনলাইনে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি পোস্টার প্রকাশ করে ইসলামিক স্টেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “তোমরা যদি ভেবে থাকো যে বাংলা এবং হিন্দ এলাকায় (ভারতে) খিলাফতের সেনাদের তোমরা চুপ করিয়ে দিয়েছ, তাহলে তোমরা ভুল ভাবছ। খিলাফতের সেনারা চুপ করে থাকে না। আমরা বদলা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি। আমাদের চেষ্টা
কোনওদিন বৃথা যাবে না। ইনশাআল্লা আমরা সফল হবই। বাংলা এবং হিন্দে খিলাফত প্রতিষ্ঠা হবেই।”
ঢাকার পুলিশ প্রধান আসাদুজ্জামান মিঞা আগেই জানিয়েছিলেন, “সন্ত্রাসবাদীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পুলিশ সবরকমভাবে তৈরি আছে। আমরা শহরের প্রতিটি কোনায় নজরদারি, টহলদারি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।” নিউ ইয়র্কে অবস্থিত মার্কিন সেনা অ্যাকাডেমির সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান কমব্যাটিং টেররিজম সেন্টার সাফ জানিয়েছে, কলম্বো এবং শ্রীলঙ্কাজুড়ে ভয়াবহ হামলার পর আইসিস-খোরাসান আরও হামলা চালানোর ছক কষছে। এই মুহূর্তে খোরাসানের জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশ ও পাকিস্তানের ফাটা এলাকায়। ফাটা অর্থাৎ ফেডেরালি অ্যাডমিনিস্ট্রার্ড ট্রাইবাল এরিয়া। হাফিজ কান এবং আবু বেঙ্গলি দু’জনেই ইসলামিক স্টেটের প্রদান আবু বকর আল বাগদাদির প্রতি তাদের আনুগত্য জানিয়েছে।
‘আইসিস-খোরাসান’ সাফ জানিয়েছে, তারা মনে করে লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ, হাক্কানি নেটওয়ার্ক, জামাত-উদ-দাওয়া এবং ইসলামিক মুভমেন্ট অফ উজবেকিস্তান (আইএমইউ) হল ভুলভাল জেহাদি সংগঠন। এদের নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই। এদের হয় ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে জুড়ে যেতে হবে নতুবা এদেরকে ধ্বংস করা হবে। কারণ আল্লার সাম্রাজ্য বা খিলাফতের উপর আর কোনও আদর্শ থাকতে পারে না। জেহাদের উদ্দেশ্যই হল
খিলাফত গঠন। ইসলামিক স্টেট মনে করে শিয়া মুসলমান, সুফি, ইয়াজিদি, হাজারা ও কুর্দরা ইসলাম বিরোধী জনগোষ্ঠী। এদের নিশ্চিহ্ন বা খতম করা পবিত্র কর্তব্য। অন্যদিকে, ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতা তথা লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদের শ্যালক হাফিজ আবদুর রহমান মাক্কিকে গ্রেপ্তার করল পাকিস্তান পুলিশ। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হল। জামাত-উদ-দাওয়া এবং
ফালাহ-ই-ইনসানিয়ত ফাউন্ডেশনের প্রধান মাক্কিকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপ এবং লোক দেখানো পদক্ষেপ বলে মনে করছে ভারত সরকার। এদিকে পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার জেরে ৩০ মে পর্যন্ত পাকিস্তানের আকাশপথ ভারতীয় যাত্রীবাহী বিমানের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.