সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত সরকারের নাগরিকত্ব সংশোাধনী বিল ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে এতদিন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল রাষ্ট্রসংঘের দু’-একটি শাখা সংগঠন। আমেরিকা, ইউরোপের কয়েকটি দেশ ‘এনআরসি’ ও ‘সিএএ’ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন)-এর তীব্র নিন্দাও করে। ভারতের ভাবমূর্তি খারাপ হওয়ায় তখন পাকিস্তান উল্লাসে উচ্ছ্বসিত ছিল। কিন্তু এই উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসা আক্রমণের জন্য এবার ইমরান খানের সরকারকে এক হাত নিল রাষ্ট্রসংঘ।
রাষ্ট্রসংঘের ‘কমিশন অন দ্য স্টেটাস অফ দ্য উইমেন’ (সিএসডব্লু)-এর পক্ষ থেকে পেশ করা একটি রিপোর্টে সম্প্রতি পাকিস্তানের বর্তমান শাসক দল পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) তীব্র বৈষম্যমূলক কাজকর্মকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব সঙ্কটের জন্য দায়ী করা হয়েছে। কমিশনের রিপোর্ট স্পষ্টই বলছে, পাকিস্তানে হিন্দু এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষত ওই সম্প্রদায়ভুক্ত নারীদের অবস্থা আরও খারাপ। এই দুই সম্প্রদায়ের মহিলাদের যখন খুশি অপহরণ, খুন, ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এই ঘটনাগুলিতে পুলিশ এফআইআর নিতেই চায় না।
চলতি মাসেই প্রকাশ পেয়েছে সিএসডব্লু-র ৪৭ পাতার ওই রিপোর্ট। ‘আক্রমণের মুখে পাকিস্তানের ধর্মীয় স্বাধীনতা’ শীর্ষক এই রিপোর্টে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে পাকিস্তানের বর্তমান হিংসা ও নৈরাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে। রিপোর্ট বলছে, শিয়া, হাজা, মোহাজির, আহমদিয়া বিরোধী আইন প্রয়োগ করে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর দেশ ছাড়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একঘরে করা হচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দার জন্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বাকি সম্প্রদায়ের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালাচ্ছে। পাঞ্জাব ও সিন্ধ অঞ্চলে ১৮ বছরের কম বয়সি হিন্দু-সহ অ-মুসলিম মেয়েদের বারবার অপহরণ এবং জোর করে বিয়ে করার ঘটনা ঘটে। কারণ তারা আর্থ-সামাজিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির অংশ।
রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘প্রতি বছর অসংখ্য অ-মুসলিম মেয়েদের পাকিস্তানে অপহরণ করা হয়। ধর্মান্তরিত করিয়ে জোর করে মুসলিম পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। বেশির ভাগ মেয়েই আর বাড়ি ফিরতে পারেন না। পুলিশি সদিচ্ছার অভাব, দুর্বল বিচারব্যবস্থা এবং সর্বোপরি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তাদের বৈষম্যমূলক আচরণের জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে।’’ বেশ কয়েকটি উদাহরণও তুলে এনেছে সিএসডব্লু-র রিপোর্ট, যা দেখাচ্ছে ক্রমেই পাকিস্তানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছেন সংখ্যালঘুরা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়া ‘মোহাজির’ মুসলমানদের। ২০১৯ সালের মে মাসে রমেশ কুমার মাহি নামক এক সার্জেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি কোরানের একটি পাতায় মুড়ে ওষুধ বিক্রি করেছেন। তাঁর দোকান-সহ আশপাশের হিন্দুদের দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.