ছবি: প্রতীকী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পিপিই দূর অস্ত। ঠিকমতো মাস্ক-গ্লাভসই জুটছে না। অথচ করোনা যুদ্ধের একেবারে সামনের সারিতেই তাঁরা। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে এমনই অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন রুশ চিকিৎসকরা। এই তথ্যে চমকে গেলেও অত্যন্ত রূঢ় বাস্তব এটাই যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে একেবারে অপ্রস্তুত থাকা রাশিয়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবা চলছে এভাবেই। অন্যকে সুস্থ করতে গিয়ে সংক্রমণের বলি হচ্ছেন চিকিৎসকরাই। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে এল আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা। দক্ষিণ মস্কোয় দুই চিকিৎসক হাসপাতালের জানলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আরও একজনের অবস্থা গুরুতর। কারণ তদন্তসাপেক্ষ তো বটেই। তবে প্রাথমিক অনুমান, কাজের নিরাপত্তাহীনতা এবং বিপুল চাপের জেরে মানসিক অবসাদ থেকেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত।
নোভেল করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বেই থাবা বসালেও, রাশিয়া এতদিন তা থেকে দূরে ছিল। কিন্তু এপ্রিলের শেষ থেকে ধীরে ধীরে সেখানেও জাঁকিয়ে বসেছে মারণ জীবাণু। দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই করোনায় আক্রান্ত। একেকদিনে সংক্রমণের হার ছাপিয়ে চলেছে অন্য যে কোনও দেশকেই। ভাইরাস দমনে সীমান্ত সিল করা ছাড়া রাশিয়ার তেমন প্রস্তুতিও ছিল না। ফলে আঘাত তাদের উপর একটু বেশিই হয়েছে। এমনকী চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যন্ত যথাযথ সুরক্ষা দিতে অপারগ পুতিন প্রশাসন। দিন কয়েক ধরেই এই অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল যে পিপিই, মাস্ক পর্যাপ্ত নেই চিকিৎসকদেরই। তাই তাঁরা নিজেরাই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি, মৃত্যুর হারও কম নয় চিকিৎসক মহলে। ফলে তীব্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তাঁদের মধ্যে।
সেই কারণেই কি মরণঝাঁপ দিলেন দুই চিকিৎসক? প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। তবে সহকর্মীরা বলছেন, দক্ষিণ মস্কোর ভোরোঝেঙ্ক অঞ্চলের চিকিৎসক আলেকজান্ডার শুলেপভের কাজ ছিল অ্যাম্বুল্যান্সে। যথাযথ সুরক্ষা না থাকার কারণে তিনি ও তাঁর সহকর্মী প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। সেকারণে কর্তৃপক্ষের চক্ষুশূল হন কিছুটা। এরপর শুলেপভ নিজেই COVID-19 পজিটিভ হয়েছিলেন। তাঁর নিজের চিকিৎসাও চলছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে তিনি নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও তাঁকে নিজের শিফটের কাজ সম্পূর্ণ করার চাপ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। মানসিক চাপ আর নিতে পারেননি। হয়ত তাই হাসপাতালের জানলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন। আবার কারও মতে, কাজের চাপ বা নিরাপত্তাহীনতা নয়। শুলেপভ ধূমপানের জন্য হাসপাতালের জানলা দিয়ে বাইরে বেরতে চাইছিলেন। তাতেই পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, তাঁর শরীরের হাড় এমনভাবে ভেঙে গিয়েছিল আর মাথায়ও এতটাই মারাত্মক চোট ছিল যে বাঁচানো যায়নি।
আরেক চিকিৎসকের আত্মহত্যার কারণ নিয়ে যে জল্পনা উঠছে, তা খানিকটা এরকম – করোনা রোগীদের চিকিৎসা করায় তিনি নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে সহকর্মীরা তাঁর দিকে আঙুল তুলেছিল। সেই অপবাদ সহ্য করতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রাণে রক্ষা পেলেও, শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক বলে খবর। এইভাবেই করোনা যুদ্ধে শামিল রাশিয়ার সামনে সারির সৈনিকরা, যেখানে তাঁর নিজেদের নিরাপত্তাই বড়সড় প্রশ্নের মুখে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.