সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মধ্যবর্তী নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। পথের কাঁটা সরিয়ে প্রতিশোধ নিতে তৎপর হয়ে উঠলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর নির্দেশে পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। বলা ভাল তাঁকে ছাঁটাই করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে চলতি এফবিআই তদন্তের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ রুশ তদন্ত বন্ধ করার মরিয়া চেষ্টা বলেই মন্তব্য করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।
[ভোটের ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরা হল না, দান্তেওয়াড়ায় নিহত বাঙালি জওয়ান]
মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসে একাধিপত্য হারিয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। সেনেটে গরিষ্ঠতা পেলেও হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস গিয়েছে ডেমোক্র্যাটদের দখলে। যার জেরে অশনি সংকেত দেখছেন ট্রাম্প। রুশ হস্তক্ষেপ কাণ্ডে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু সেশনস তাতে কান দেননি। তাই তাঁর বিদায় কার্যত নিশ্চিতই ছিল। সেনেটে রিপাবলিকান গরিষ্ঠতা থাকায় বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করাতে ট্রাম্পের কোনও সমস্যা হবে না। তাই সুযোগ পেয়েই সেশনসকে ছেঁটে ফেললেন তিনি।
ট্রাম্পকে লেখা ইস্তফাপত্রে সেশনস উল্লেখ করেছেন যে, প্রেসিডেন্টের অনুরোধেই তিনি পদ ছাড়ছেন। ৭১ বছরের সেশনস প্রাক্তন সেনেটর। ওয়াকিবহাল মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ফলাফলের প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরই হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফ জন কেলি ফোনে সেশনসকে ট্রাম্পের নির্দেশের কথা জানান। সন্ধ্যায় শেষ বারের মতো বিচার বিভাগে এসে ইস্তফাপত্র লিখে দেন সেশনস। সামনের লনে তখন অপেক্ষমান শ’ দেড়েক কর্মী। যাঁরা হাততালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। গাড়িতে ওঠার আগে আবেগপ্রবণ সেশনস তাঁদের শুভেচ্ছা জানান। এগিয়ে এসে করমর্দন করেন অস্থায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথু হুইটেকার। যিনি সেশনসের সঙ্গে কাজ করে সম্মানিত বোধ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন। পরে এক বিবৃতিতে পূর্বসূরিকে ‘আদ্যন্ত সৎ, ৪০ বছর ধরে জনতার একনিষ্ঠ সেবক’ বলে বর্ণনা করেন হুইটেকার। সেশনসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল কয়েক দিন পরে বেছে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। আপাতত বিচার বিভাগের আওতায় থাকা সমস্ত তদন্ত তদারকি করবেন হুইটেকার। তার মধ্যে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রসেনস্টেইনের অধীনে থাকা রুশ কাণ্ডের তদন্তও রয়েছে।
সেশনস বিদায় প্রত্যাশিতই ছিল ওয়াকিবহাল মহলের কাছে। তাদের এখন একটাই প্রশ্ন–রবার্ট মুলার কবে বিদায় নেবেন? কারণ, গত জুলাইয়েই এক সাক্ষাৎকারে এফবিআই-এর বিশেষ কৌঁসুলি মুলারের রুশ কাণ্ডের তদন্তে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ার ইঙ্গিত ছিল। একটি পত্রিকায় উত্তর সম্পাদকীয় লিখে হুইটেকার মন্তব্য করেছিলেন, খুব বিপজ্জনক সীমানায় পৌঁছে গিয়েছেন মুলার। ওই সীমা অতিক্রম করলে বিপদ ঘটতে পারে। কারণ, ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্তা ও তাঁর ব্যক্তিগত আইনজীবীর বিরুদ্ধে মুলার ফৌজদারি অভিযোগ এনেছেন। যার জেরে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট বিপাকে পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেই বিষয়গুলি মাথায় রেখেই হুইটেকারকে রুশ তদন্ত তদারকির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছেন হাউসের ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি। তাঁর মত, রুশ তদন্ত বন্ধের মরিয়া চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। তারই ফলশ্রুতি সেশনসকে ছাঁটাই। ঘটনাটি অতীব সন্দেহজনক বলে মনে করছেন সেনেটে ডেমোক্র্যাট দলনেতা চাক শুমার। রুশ তদন্তের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে কংগ্রেসকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পেলোসি।
এই পরিস্থিতিতে ‘রুশ তদন্ত’ তাদের সমস্যা নয় বলে দায় ঝেড়ে ফেলেছে মস্কো। সেশনস ছাঁটাই হওয়ার পর এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন জানিয়েছে, ‘এটা আমাদের সমস্যা নয়। মার্কিন বন্ধুদের চিন্তা। মুলারের তদন্তে এমন কিছু উঠে আসে নি, যাতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ প্রমাণিত হয়।’ উল্লেখ্য, ট্রাম্পকে জেতাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ রাশিয়া বারবারই খারিজ করেছে। ২০২০-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নিজের মন্ত্রিসভা ঢেলে সাজবেন ট্রাম্প। জেফ সেশনস তার প্রথম বলি। লাইনে আরও অনেকে রয়েছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। এর পর কে? সেই চিন্তাতেই ঘুম উড়েছে ট্রাম্পের সতীর্থদের।
[বন্দিদশা কাটিয়ে দীপাবলিতে ঘরে ফিরল ছেলে, খুশির হাওয়া গ্রামে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.