সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘আমি চললাম, এবার সব আপনার।’ এক গোপন ফোনালাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইপ এরদোগানকে নাকি এমনটাই বলেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের এই আলোচনা বেশিক্ষণ গোপন থাকেনি সদ্যপ্রাক্তন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিসের কাছে। ট্রাম্প যে আচমকা সিরিয়া থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করবেন, তা মোটেও আঁচ করতে পারেননি ‘ম্যাড ডগ’ ম্যাটিস। শেষবারের মত ট্রাম্পকে বোঝাবার চেষ্টা করে পদত্যাগ করেন তিনি।
[মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নিয়ে বিবাদ, বন্ধ মার্কিন কোষাগার]
সামরিক ক্ষেত্রে ম্যাটিসের বিচক্ষণতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। বিশ্বে ‘আঙ্কল স্যাম’-এর দাপট বজায় রাখতে অবদানও যথেষ্ট মেরিন কর্পস-এর এই প্রাক্তন জেনারেলের। আগ্রাসী মনোভাবের জন্য ‘ম্যাড ডগ’ হিসেবে পরিচিত ম্যাটিস। জানা গিয়েছে, সিরিয়া থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে ম্যাটিসের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি ট্রাম্প। বিষয়টি জানতে পেরে তীব্র প্রতিবাদ করেন তিনি। মার্কিব প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে শেষবারের মতো তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন ম্যাটিস। তবে বিফল হয়ে শেষমেশ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। সূত্রের খবর, সিরিয়া নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের গোপন বোঝাপড়া জানতে পেরে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি ‘ম্যাড ডগ’। বহু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরাও সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিরোধী। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা বিদায় নেওয়ার দিন গুনছে তুরস্ক। সীমান্তে যুদ্ধের প্রস্তুতি তুঙ্গে এরদোগান বাহিনীর। ‘আঙ্কল স্যাম’ পাততাড়ি গোটালেই সিরিয়ায় কুর্দিশ বাহিনী ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’-এর (এসডিএফ) উপর হামলা চালাবে তুরস্কের সেনা।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকাকে মদত দিচ্ছে এসডিএফ। রুশ সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এই মিলিশিয়া। এদিকে এরদোগানের অভিযোগ, তুরস্কে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দিচ্ছে এসডিএফ। ‘কুর্দিস্তান’ গঠনে কুর্দ জঙ্গিদের হাতিয়ার দিচ্ছে এসডিএফ। সব মিলিয়ে মার্কিন সেনা পিছু হঠলে এরদোগান, আসাদ ও রাশিয়ার সেনার বিপক্ষে একা মাঠে নামতে হবে এসডিএফকে। মিত্রদের এভাবে একা ছেড়ে আসা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারেননি ম্যাটিস।
সদ্য পশ্চিম এশিয়ায় নয়া সমীকরণ তৈরি করে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, সন্ত্রাস জর্জরিত দেশটিতে পরাজয় হয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের। তাই সে দেশে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যদের ফেরত নিয়ে আসা হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে আমেরিকার প্রস্থানে সিরিয়ায় আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে রাশিয়া ও ইরান। আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠবেন সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদ। মার্কিন সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইজরায়েলও। সীমান্তের কাছেই রুশ সেনার উপস্থিতিতে অশনিসংকেত দেখছে তেল আভিভ। প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়েছেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করবে ইজরায়েল। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে সিরিয়া নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা।
[ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাত, ইস্তফা দিলেন ‘ম্যাড ডগ’ ম্যাটিস]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.