প্রতীকী ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্ববাসীর জন্য বিপদবাণী শোনাচ্ছে রাষ্ট্রসংঘ। বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এত দ্রুত জীব বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে যে পৃথিবীতে খাদ্য সংকট হতে আর বেশি দেরি নেই। একাধিক প্রাণী, উদ্ভিদের বিলুপ্তি, সংখ্যা হ্রাস এত দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে যাতে গোটা খাদ্য শৃঙ্খলই ভেঙে পড়তে পারে। সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন বা ফাও-য়ের তরফে একটি সমীক্ষায় উঠে এল এমনই উদ্বেগের তথ্য।
প্রকৃতি, প্রাণীজগত দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়মে আবদ্ধ। প্রত্যেক জীব বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতি থেকে নিজের খাবার নিজেরাই জোগাড় করে নেয়। এভাবেই পৃথিবীজুড়ে একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খল তৈরি হয়ে গিয়েছে, যা জীববিজ্ঞানের ভাষায় খাদ্যশৃঙ্খল। ছোটবেলায় বিজ্ঞানের বইতে এই খাদ্য শৃঙ্খল, জীব বৈচিত্র্যের কথা আমরা সকলেই পড়েছি। কিন্তু বর্তমানের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাপেক্ষে বইয়ে পড়া সেই বিদ্যে যেন ঠিক মিলছে না। ঘাসফড়িং খায় চতুষ্পদী প্রাণী, চতুষ্পদী প্রাণীরা আবার খাদ্য হয়ে চলে যায় মানুষের পাতে। অর্থাৎ খাদ্যের জন্য এভাবেই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। এটাই সাধারণ খাদ্য শৃঙ্খল। একইভাবে উদ্ভিদজগতও একটি শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কিন্তু ফাও-য়ের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনবিস্ফোরণের সঙ্গে পাল্লা খাদ্যের জোগান বৃদ্ধির বদলে কমে যাবে ব্যাপক হারে। নিরামিষ খাবারই হোক বা আমিষ, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার পাবেন। রিপোর্ট বলছে, আমিষ খাবার জোগান দেয় পৃথিবীর মাত্র ৪০রকমের প্রাণী। তার মধ্যে বহু প্রাণী জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অভিযোজিত হতে না পেরে বিলুপ্তির পথে চলে যাবে। যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে ডিম, মাছ, মাংস ততটা সহজলব্ধ হবে না। অন্যদিকে,মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাতে যে পরিমাণ শস্য বোনা হয়, তার মধ্যে ৬৬ শতাংশ সরাসরি খাবার হিসেবে কাজে লাগে। কৃষিজমির অভাবে শস্য চাষ কম হলে, স্বাভাবিক নিয়মেই চাহিদার তুলনায় জোগান কমবে। খাদ্য শৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত যেসব প্রাণী বা উদ্ভিদ আছে, তাদের নিজেদের অস্তিত্বই বিপন্ন। বিশেষত বড়, গভীর বনাঞ্চলের স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছদের।
ফাও-য়ের ডিরেক্টর জেনারেল হোসে গ্রাজিয়ানো ডি’ সিলভার কথায়, ‘জীব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, নিজেদের সুরক্ষিত রাখা কঠিন কাজ। মানুষের জন্য আরও ভালভাবে খাদ্য উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়া দরকার। আর খাদ্যশৃঙ্খল বদল হলে, সেই বদলকেই নতুনভাবে কাজে লাগাতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে নতুন ধরনের শস্য চাষের কথা ভাবতে হবে।’ অর্থাৎ তিনি বলতে চান, পরিবর্তনের ইতিবাচক দিকটা ধরে চললে, সমস্যা তৈরি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ডি’ সিলভার কথামতো সবটাই এত সহজ নয়। এমন অনেক উদাহরণ আছে। যেমন, আফ্রিকার ছোট্ট দেশ ঘানার বাসিন্দারা সংগ্রাম করেও বাঁচিয়ে রাখতে পারেননি তাঁদের বনাঞ্চল। শিল্পের জন্য তা ছেড়ে দিতে হয়েছে। অথচ সেদেশের বেশিরভাগ মানুষই খাদ্যের ব্যাপারে বন্যপ্রাণের উপর নির্ভরশীল। নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড-সহ পশ্চিম ইউরোপের চার দেশে একধরনের মৌমাছি চাষ হত, তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আরব দুনিয়ার দেশ ওমানের তাপমাত্রা দিনদিন এত বাড়ছে যে সেখানে বেরি, ডুমুরের চাষ আর করা যাচ্ছে না। ফলে মানুষজন খাদ্যাভ্যাস পালটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন।
[আমেরিকার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই, পর্দা সরিয়ে মহিলা রাষ্ট্রদূতেই ভরসা সৌদি প্রশাসনের]
সমস্যা তৈরি হলে, তার সমাধানও হবে। এই আপ্তবাক্যে চোখ বন্ধ ভরসা করতে পারলে ভাল হতো। তবে ফাও-য়ের রিপোর্ট সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার আরও দ্রুত সমস্যার রাস্তা চওড়া করছে বলে উল্লেখ রিপোর্টে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে খাদ্য সরবরাহের উৎসগুলো হয়ত পিছিয়ে পড়বে। আজকের দিনে যেমন অনেকে দু’বেলা দু’মুঠো ঠিকমতো খেতে পান না, এই সংখ্যাই হয়ত হু হু করে বাড়তে থাকবে আগামী কয়েক বছরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.