Advertisement
Advertisement
করোনা মোকাবিলায় ভিয়েতনাম

বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেই বাজিমাত, করোনা যুদ্ধে সফল ভিয়েতনাম

চিনের প্রতিবেশী হয়েও এখনও পর্যন্ত ১ জনেরও মৃত্যু ঘটেনি এই দেশে।

This is how Vietnam government handled COVID-19 situation
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:April 24, 2020 11:15 am
  • Updated:April 24, 2020 11:15 am  

অর্ঘ‌্য মণ্ডল, হ‌্যানয়: ছেলেবেলায় স্কুলে পড়ার সময় বাবা-কাকাদের মুখে প্রায়ই শুনতাম ‘তোমার নাম, আমার নাম, ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম’। পরবর্তীতে কলেজ জীবনে বিড়লা তারামণ্ডলের কাছে একটা ছোট্ট ব্রোঞ্জের মূর্তি দেখিয়ে এক বন্ধু বলেছিল, ইনি হো চি মিন, ভিয়েতনামের স্রষ্টা। আর সেই সবুজে ঘেরা, সৌন্দর্যের অমরাবতীর মতো দেশটায় যে চাকরি করতে আসব, তা কখনও ভাবিনি। তবে এখানে কর্মসূত্রে এসে ঠাঁই না নিলে জানতেই পারতাম না, বিশ্বগ্রাসী করোনার ভাইরাসকে কীভাবে বাগে আনা যায়। তথ‌্য শুনলে কলকাতাবাসীরা চমকে যাবেন! এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৬৮ জন করোনা পজিটিভ রোগীর সন্ধান মিললেও একজনও মারা যাননি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২২৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। অথচ করোনার জন্মভূমি চিন শুধু প্রতিবেশী নয়, ভিয়েতনামের সাতটি প্রদেশের সীমান্তও লালফৌজের নিয়ন্ত্রণে। হ্যাঁ, আমাদের এখানেও এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন চলছে। ২২ এপ্রিল ৩৬টি জেলায় উঠে গিয়েছে। কিন্তু আরও ১৫টি জেলায় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের নিয়মকানুন কড়াভাবে মেনে চলতে হবে। প্রথম লকডাউন ১ এপ্রিল চালু করেছিল, কিন্তু স্কুল বন্ধ হয়েছিল ফেব্রুয়ারির প্রথমে।

কীভাবে এই সাফল‌্য এল? কোন জাদুমন্ত্রবলে প্রায় ন’কোটি তিরিশ লক্ষ মানুষের দেশে আজ পর্যন্ত একজনকেও কোভিড-১৯ নিজেদের গ্রাসে নিতে পারল না? কলকাতা থেকে বহু মানুষ আমায় ফোন-মেসেজ করে একথা বারে বারে জানতে চেয়েছেন। নিজের অফিস হ‌্যানয়ে থাকার সুবাদে এদেশের অনেক প্রশাসনিক কর্তাকে চিনি। সবচেয়ে বড় কথা, ডিজিটাল মাধ‌্যমে এখানে সবাই সবকিছুই জানতে পারে। সাধারণ মানুষ খুবই টেক-স‌্যাভি। একটা নবজন্ম নেওয়া কমবয়সি রাষ্ট্র হওয়ার বেশ কিছু সুবিধাও আছে। সেটা ভিয়েতনাম অত‌্যন্ত সুকৌশলে কাজে লাগাচ্ছে। কমিউনিস্ট শাসিত দেশটায় জনতা অত‌্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ, প্রশাসনিক নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। সর্বোপরি প্রত্যেকটি নাগরিক অত‌্যন্ত সচেতন। আইসোলেশন ম‌্যানেজমেন্টের সঙ্গে মোবাইল ফোনে মেসেজ ও গাইডলাইন পাঠিয়ে মানুষকে প্রতিদিনই সতর্ক করেছে ভিয়েতনাম সরকার।

Advertisement

[আরও পড়ুন: আমেরিকা মুখ ফেরাতেই এগিয়ে এল বেজিং, WHO-কে আরও ৩ কোটি ডলার চিনের]

প্রথমে যে বিষয়টি জানিয়ে দিই তা হল, জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ যখন এখানে চৈনিক নববর্ষের ছুটি চলছিল তখন করোনা মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে। করোনা রোগীদের জন‌্য ‘স্পেশাল হসপিটাল’, কোয়ারান্টাইন সেন্টার থেকে শুরু করে চিকিৎসার যাবতীয় পরিকাঠামো ২২ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পূর্ণ করে ফেলেছিল। তবে যে সিদ্ধান্ত ভিয়েতনামকে করোনার সংক্রমণ থেকে কার্যত বাঁচিয়ে দিল তা হল, বিমানবন্দরের সঙ্গেই কোয়ারান্টাইন সেন্টার তৈরি। বিদেশ থেকে যাঁরাই এসে এয়ারপোর্টে নেমেছেন, তিনি যত বড় প্রভাবশালী হোন না কেন, তাঁকে পাশের কোয়ারান্টাইন সেন্টারে ১৪ দিন থাকতে হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি এই নিয়ম সবাইকেই মানতে হয়েছে। দিল্লিতে পড়তে যাওয়া বেশ কিছু ভিয়েতনামী ছাত্রও ফিরে এসে ওই সেন্টারে ১৪ দিন কাটিয়ে তবেই ঘরে ফিরেছেন। যেহেতু রোগটা বিদেশ থেকে আসছে তাই অন‌্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করেই বড় সাফল‌্য।

এখানে বসে মাতৃভূমির খবর নিয়মিত পড়ছি। পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা-হাওড়া রেড জোনে গেলেও বাঁকুড়া-পুরুলিয়া বা বারুইপুর-বসিরহাট এখনও বিপদমুক্ত। সবুজ অরণ‌্য, প্রকৃতি এখনও মানুষকে যে বাঁচিয়ে রেখেছে তার প্রমাণ করোনার লড়াইয়ে গ্রামীণ সভ‌্যতায় কোভিডের হানা কম। কলকাতা-হাওড়ার মতো এখানেও ভিয়েতনাম সরকার ১২টি জেলাকে ‘রেড মার্ক’ দিয়ে হাই রিস্ক জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। মধ‌্যমমানের ১৫টি জেলাকে গোলাপি এবং নীল রং দিয়ে ৩৬টি জেলাকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে সাধারণ মানুষকে নানারকম বিধিনিষেধে আটকে রেখেছে। হাই রিস্ক জোনে এখনও আছে হো চি মিন শহর ছাড়াও দা নাং, লাও চাই, পোয়াং নি, বাক নি, থান ওয়া, ওয়াং নামের মতো পরিচিত শহরগুলি। কিন্তু পর্যটন নির্ভর ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে মূল চিন্তা আগামী দিনের কথা ভেবে। কারণ, অপূর্ব সৌন্দর্যের খনি এই দেশটায় যদি বিদেশ থেকে পর্যটক না আসে তাহলে ‘ইয়ং কান্ট্রি’ ভিয়েতনাম কিন্তু আর্থিকভাবে বড় সমস‌্যায় পড়বে।

[আরও পড়ুন: করোনা আবহে সামরিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ইরানের, উদ্বিগ্ন আমেরিকা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement