সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাঁচতে হবে। নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করতে হবে। এই তাগিদেই টানা ১০ বছর পুরুষ সেজে ছিলেন আফগানিস্তানের নাদিয়া গুলাম (Nadia Ghulam)। তালিবানি তাণ্ডবে (Taliban Terror) যখন তাঁর জন্মভূমি জর্জরিত, তখন ভয়াবহ সেই দিনগুলির স্মৃতি স্মরণ করলেন তিনি।
আজ স্পেনের (Spain) ক্যাটালোনিয়ায় বাস নাদিয়ার। নিজের পরিচয় আর লুকিয়ে চলতে হচ্ছে না তাঁকে। প্রাণ ভয়ে ঘরের ভিতরে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে না। খেটে রোজগার করছেন, সেই অর্থে নিজের শর্তে বাঁচতে পারছেন। কিন্তু আত্মীয়, বন্ধুরা এখনও আফগানিস্তানে (Afghanistan) রয়ে গিয়েছেন। তাঁদের নিয়ে চিন্তা তো হয়! আবার পুরনো দিনগুলোর কথাও বারবার মনে পড়ে।
১৯৮৫ সালে আফগানিস্তানের মাটিতে জন্ম হয় নাদিয়ার। পুরো নাম নাদিয়া গুলাম দাস্তগির। ছোটবেলা থেকেই বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁর দেশে মেয়েদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার নেই। বোরখার আড়ালেই তাঁদের থাকা বাধ্যতামূলক। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই তালিবানদের ছোড়া বোমা এসে পড়েছিল তাঁর বাড়িতে। পরিবারের অনেকেই প্রাণ হারিয়েছিলেন সেই হামলায়। নাদিয়ার ভাইয়েরও মৃত্যু হয়েছিল। নাদিয়াকে পাক্কা ২ বছর হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। একটু সুস্থ হতে না হতেই ফের পট পরিবর্তন। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের দখল নেয় তালিবান। নাদিয়ার চারপাশের জীবন যেন ছারখার হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু নিজেকে ও পরিবারকে তো বাঁচাতেই হবে। সেই তাগিদেই পুরুষের বেশ ধারণ করেন আফগান তরুণী। মৃত ভাইয়ের পরিচয়ে বাঁচতে শুরু করেন। টানা ১০ বছর এই ভাবে কাবুলের এক মসজিদে কাজ করেন। সেই আয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করেন। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত তা করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর আর পারছিলেন না। শরীরের নারীসত্ত্বা জানান দিচ্ছিল। শেষে এক স্বেচ্ছাসেবীর সংস্থার সাহায্যে কাবুল থেকে পালাতে সক্ষম হন। বিশ্ব নাদিয়াকে চিনেছিল ২০১০ সালে, যখন তিনি ২৫ বছরের যুবতী। নিজের কাহিনি বলেছিলেন সাংবাদিক অ্যাগনেস রটগেরকে। ‘দ্য সিক্রেট অফ মাই টারবান’ (The Secret Of My Turban) উপন্যাসে লিপিবদ্ধ হয়েছিল তাঁর কাহিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.