সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন পরীক্ষা করাতে। চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়, শরীরে করোনা ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। ফলে চিনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দাকে সরাসরি ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আইসোলেশন ওয়ার্ডে। আর বাড়িতে পড়ে থাকে তাঁর সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত সন্তান। এতগুলো দিন কোনও যত্ন না পেয়ে, খাবার-জল কিছুই না পাওয়ায় সেই কিশোরকে গ্রাস করে মৃত্যু। আর আইসোলেশন ওয়ার্ডে বসে বাবাকে নিজের কানে শুনতে হয় সন্তানের মৃত্যু সংবাদ। করোনা কবলিত চিনে এও এক করুণ ছবি।
হুবেই প্রদেশের হুজিহার বাসিন্দা ইয়ান জিয়াওয়েন। ছেলে ইয়ান চেন ছোটবেলা থেকেই সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। কারও সাহায্য ছাড়া একটা মুহূর্তও চলে না তাঁর। বছর কয়েক আগে মা-কে হারিয়েছে চেন। তারপর থেকে বাবাই ছিল তার সব। স্নান করানো, খাওয়ানো থেকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া – মায়ের অভাব চেনকে বুঝতে দেননি বাবা জিয়াওয়েন। কিন্তু সেই বাবাকেই করোনা রোগী সন্দেহে ছেলের থেকে পৃথক করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
আইসোলেশন ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে নিজের জন্য নয়, জিয়াওয়েনের চিন্তা হত ছেলের জন্য। নিউমোনিয়া থেকে একটু সুস্থ হয়ে উঠতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁর অসহায় ছেলেকে যেন একটু দেখভাল করে স্থানীয় প্রশাসন। নিদেনপক্ষে খাবার আর জলটুকু যেন তাকে খাইয়ে দেওয়া হয়। কারণ, সে একা কিছুই করতে পারে না।
সেই পোস্ট অন্য সকলের হৃদয়ে তোলপাড় ফেললেও, এতটুকুও টলাতে পারেনি প্রশাসনিক কর্তাদের মন। তাঁরা চেন সম্পর্কে কোনও খোঁজখবর নেননি। বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আর খাবার না পেয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে চেন। বাবা বাড়ি ছাড়ার ঠিক এক সপ্তাহ পর ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই খবর আইসোলেশন ওয়ার্ডে বসে শুনতে হয় জিয়াওয়েনকে।
এই ঘটনার জন্য স্থানীয় মেয়রকে দায়ী করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর পদ থেকে। কেন নিজের শহরে এমন এক অসহায় বাসিন্দার খেয়াল রাখেননি মেয়র, সেই জবাবদিহি চেয়ে পাঠিয়েছে প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্ব। জিয়াওয়েনের অবশ্য একটাই প্রশ্ন, এখন এই পদক্ষেপ নিয়ে আর কী লাভ, যখন ছেলেটাকেই হারিয়ে ফেলতে হল?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.