সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত আগস্টে কাবুল দখল করে তালিবান (Taliban)। সেই থেকেই আফগানিস্তানে (Afghanistan) নতুন করে শুরু হয়েছে এক অন্ধকার যুগ। যদিও শুরুতে জেহাদিরা বলেছিল, এটা তালিবান ২.০। নারীর অধিকার থেকে মানুষের জীবনযাত্রায় নাক গলানোর মতো বিষয়ে আগের মতো আক্রমণাত্মক থাকবে না তালিবান। কিন্তু যত দিন এগিয়েছে তত বোঝা গিয়েছে, তালিবান আছে তালিবানেই। ফলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনই আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে লেখক-শিল্পী-খেলোয়াড়দের। নানা রকম নির্যাতনের কথা সামনে আসছে। এই পরিস্থিতিতে বই ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন আতান্তরে। কেননা তালিবানের কাছে বই মানে ‘অপবিত্র’। তাই কোনও ফতোয়া জারি না করা হলেও হু হু করে কমছে বই বিক্রি। আর ক্রমশ বিপণ্ণ হয়ে পড়ছেন বই বিক্রেতারা।
গোটা আফগানিস্তান জুড়ে চলছে তালিবানি রক্তচক্ষুর হাওয়া। ফলে সরাসরি ফতোয়ার মুখে না পড়েও নিত্য নৈমিত্তিক ভোগান্তি সঙ্গী বইওয়ালাদের। এক বিক্রেতা জানাচ্ছে, প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার স্মৃতিকথা ‘বিকামিং’ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বলতে গেলে বইটির বিষয়বস্তু নয়, আলোচনায় উঠে এসেছিল বইটির মলাট। কেন সেখানে মিশেলকে হিজাব পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে না, এই প্রশ্ন উঠেছিল।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের তালিবানি শাসনের আমলে অবশ্য ‘অপবিত্র’ হিসেবে গণ্য করা হত। আর সেই কারণে জোর করে দোকান বন্ধ করে দিত তালিবান। এবার মুখে কিছু না বললেও পরিস্থিতি একই রকম ভয়াবহ। তবু এখনও বই খুলে রেখেছেন বহু দোকানদার। যদিও নিয়মিত দোকানে ঢুঁ মারতে দেখা গিয়েছে তালিবানকে। এক দোকানের ম্যানেজার জানাচ্ছেন, দোকানে এসে দুই তালিবান জঙ্গি বুঝে নিতে চাইছিল দোকানে কোনও রোম্যান্টিক বই রাখা আছে কিনা। তবু এই পরিস্থিতিতেও এখনও খোলা আফগানিস্তানের বইয়ের দোকানগুলি।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বই বাজার বরাবরই তরুণ বইপ্রেমীদের প্রিয় চারণভূমি। কিন্তু গত তিন মাসেই পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। এখন সেখানকার অর্ধেক দোকানেই ঝাঁপ ফেলা। আর যেগুলি খোলা, সেখানেও ক্রেতাদের প্রভূত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কেননা দেশজুড়ে বিদ্য়ুতের সমস্যার কারণে অধিকাংশ সময়ই দোকানে আলো জ্বলে না।
আবদুল আমিন হোসেইনি নামের এক মধ্যবয়স্ক বই বিক্রেতা জানাচ্ছেন, কয়েক মাস আগেও পরিস্থিতি কতটা ভাল ছিল। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে এবিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানাচ্ছেন, ”আগে তো দিনে অন্তত ৫০ জন ক্রেতা পাওয়াই যেত। কিন্তু এখনও বলতে গেলে কিছুই নেই।” অথচ তাঁর স্বপ্ন ছিল ছোটদের বইয়ের একটি প্রকাশনা খোলার। পাশাপাশি নিজেও তাঁর ছোট দুই কন্যার জন্য লেখালেখি শুরু করেছিলেন তিনি। সব স্বপ্নই ধূসর হয়ে গিয়েছে মাত্র কিছুদেনর ব্যবধানে। নতুন করে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে আফগানিস্তান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.