প্রতীকী ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালালে ফল ভাল হবে না। এবার ভারতকে সরাসরি হুমকি দিল তালিবান। তবে সে দেশে পরিকাঠামো নির্মাণে নয়াদিল্লির মদত প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি।
If they (India) come to Afghanistan militarily & have their presence, I think that will not be good for them. They’ve seen the fate of military presence in Afghanistan of other countries, so it is an open book for them: Taliban Spokesperson Muhammed Suhail Shaheen to ANI pic.twitter.com/zIw8vrxHED
— ANI (@ANI) August 14, 2021
কাতারের রাজধানী দোহা থেকে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালিবানের মুখপাত্র সুহেল শাহিন বলেন, “যদি আফগানিস্তানে সেনা নিয়ে আসে ভারত, তাহলে আমার মনে হয় এটা তাদের জন্য ভাল হবে না। আফগানিস্তানে অন্য দেশগুলির সেনাবাহিনীর কী অবস্থা হয়েছে তা তারা দেখেছে। তাই এই পরিস্থিতি তাদের জন্য খোলা বইয়ের মতো।” তবে নয়াদিল্লিকে কিছুটা আশ্বস্ত করে শাহিন বলেন, “তারা (ভারত) আফগানিস্তানের মানুষকে সাহায্য করছে। পরিকাঠামো নির্মাণেও মদত দিয়েছে ভারত। অতীতেও তারা আফগানদের সাহায্য করছে। আমার মনে হয় এটা প্রশংসনীয়।” একইসঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের বিষয়ে তালিবানের মুখপাত্র শাহিন বলেন, “গুরুদ্বার থেকে আমরা নিশান সাহেব (শিখ পতাকা ) সরাইনি। হামলার ভয়ে শিখরাই ওটা সরিয়েছিল। তবে আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। এবং ফের সেই পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।” এদিকে, তালিবানের সঙ্গে ভারতের পর্দার আড়ালে বৈঠক হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শাহিন বলেন, “আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিদের দেখা হওয়ার কথা শুনেছি তবে সঠিক জানি না। আমার জানা মতে এখনও সেরকম কোনও বৈঠক হয়নি। তবে গতকাল দোহায় আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে ভারতের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল। তবে আমরা কোনও দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাতে আফগানিস্তানের জমি ব্যবহার করতে দেব না।”
They (India) have been helping the Afghan people or national projects. They did it in the past. I think that is something which is appreciated: Taliban Spokesperson Muhammed Suhail Shaheen to ANI pic.twitter.com/CF0xhQigda
— ANI (@ANI) August 14, 2021
উল্লেখ্য, কাতারের রাজধানী দোহায় আমেরিকা, চিন, পাকিস্তান ও কাবুলের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাচ্ছে তালিবান। গতকাল ছিল বৈঠকের অন্তিম দিন। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রতিনিধিরা। বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তান-ই এখন প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিদেশমন্ত্রী জয়শংকরের ঘাড়ের ব্যথা। তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবে ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’-এর বৈঠকে তালিবানদের সঙ্গে কীভাবে চলতে হবে, সেই পাঠ সম্প্রতি আফগান বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ হানিফ আতমারকে দিয়েছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনটি বিষয় তিনি নিশ্চিত করেছেন। এক, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আফগানদের সব গোষ্ঠীকে নিয়ে সরকারকে আলোচনায় বসতে হবে। রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ হতে দেওয়া চলবে না। দুই, আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসী জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য হতে দেওয়া চলবে না। সে-দেশ থেকে সন্ত্রাস রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে হবে। তিন, তালিবান নেতৃত্বকে সব সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে মুক্ত হতে হবে। দুশানবে সম্মেলনে জয়শংকরও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বুঝেছেন, আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার তৈরি ‘কোয়াড’-এর পালটা আরও এক ‘কোয়াড’ আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। চিন, পাকিস্তান, রাশিয়া ও ইরান। এই চতুর্ভুজের প্রথম দু’জন বহু বছর ভারতের মিত্র নয়। দুশ্চিন্তার প্রথমটা আফগানিস্তানে ভারতীয় স্বার্থরক্ষা নিয়ে, দ্বিতীয়টা অবশ্যই পাকিস্তান ও কাশ্মীর। গত কুড়ি বছরে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশে ভারত চারশোরও বেশি প্রকল্প তৈরি করেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় বিলিয়ন ডলার। ভারতীয় প্রকল্পের হানি তালিবানরা করবে না বলে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু ভারত নিশ্চিত নয়। চিন তার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পে আফগানিস্তানকে শামিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুরোদমে। পূর্ব লাদাখে তারা ভারতকে যে নতুন করে বিব্রত করবে না, সেই নিশ্চয়তা নেই। মোটকথা, আফগানিস্তানে ভারতের ভাল-মন্দ এবার থেকে নির্ভর করবে অন্যদের মর্জির উপর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.