সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় আছে, জীবসেবাই শিবসেবা। করোনা ভাইরাসের কামড়ে পৃথিবীর দুঃসময়ে সেকথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন নিউ ইয়র্কের শিখ সম্প্রদায়। ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে আমেরিকার প্রাণকেন্দ্র নিউ ইয়র্কে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ রয়েছেন সেল্ফ আইসোলেশনে। তাঁদেরই রোজ রেঁধেবেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন। রান্না থেকে শুরু করে প্যাকেজিং, খাবার বিলি – সবটাই চলছে একেবারে নিয়ম মেনে। নোভেল করোনা ভাইরাসের দাপটে যখন সকলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যস্ত, এমনই সংকটের মুহূর্তে শিখরা এভাবে হাত বাড়িয়েই বুঝিয়ে দিলেন, মানুষ-মানুষের এই চিরকালীন বন্ধন ভেঙে ফেলে, এমন শক্তি নেই কোনও ভাইরাসের।
করোনার থাবায় কাবু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মৃতের সংখ্যা ৫৫০ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নিউইয়র্ক। সেখানকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষের শরীরে বাসা বেঁধেছে করোনার জীবাণু। তাঁরা রয়েছেন সেল্ফ আইসোলেশনে। একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেমন তাঁদের দিন কাটছে, তা বোঝাই যায়। তাই তাঁদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন আমেরিকান গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি। সংস্থার কো-অর্ডিনেটর হিমত সিং বলেন, “আমরা ভাত, ডাল, নিরামিষ খাবার রান্না করে দিচ্ছি। সেইসঙ্গে শুকনো ফলও দেওয়া হচ্ছে। রবিবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে প্যাকেট করে তা বিতরণ করা হবে।” এমনিতে নিউ ইয়র্কের সিংহভাগ মানুষ খাবারের জন্য হোম ডেলিভারির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই সময়ে সেই পরিষেবাও ব্যাহত। গুরুদ্বার কমিটির কাজেই তা অব্যাহত রয়ে গিয়েছে।
এতজনের রান্না, স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। তাতে হিমত সিংয়ের জবাব, “এই রান্নাবান্নার কাজে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা সকলে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দ্বারা পরীক্ষিত। তারপরেই এই কাজে হাত লাগানোর সুযোগ পেয়েছেন। সুতরাং, সংক্রমণ নিয়ে কোনও ভয় নেই। এখানকার বয়স্ক মানুষজন এই মুহূর্তে স্টোরে গিয়ে খাবার কিনতে পারছেন না। তারউপর সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কাজেই কেউ না কেউ এগিয়ে না এলে, ওঁদের খাবারই জুটবে না।”
আমেরিকান গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সেবাকর্ম এখানেই সীমাবদ্ধ নেই। তাঁরা প্রয়োজনে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা এই মানুষজনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।সংস্থার আরেক কো-অর্ডিনেটর ডক্টর প্রীতপাল সিং জানান যে সান ফ্রান্সিসকোর সৈকত এলাকার যতজনকে পারবেন, এভাবে সাহায্য করবেন। করোনা সংক্রমণ নিয়ে আশঙ্কার আবহে এখানে ‘ব্রেক দ্য চেন’ নয়, নিরাপদ দূরত্বে অথচ একসঙ্গে থেকেই ফেরাতে চাইছেন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.