সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কে বলে জম্বি শুধুই ‘আর্বান লিজেন্ড’? কল্পনার ধূসর পৃথিবী ছাড়িয়ে তার ভয়াবহ বাস্তব রূপ ধরা পড়ল বাস্তবে! একেবারে হলিউড সিনেমার মতোই ধীরে ধীরে গোটা একটা দেশের দখল নিচ্ছে অতিমানবের দল। দিনের আলো নিভলেই কবরস্থান থেকে নাকি চুরি যাচ্ছে একের পর এক মৃতদেহ। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে বাধ্য হয়ে আফ্রিকার দেশ সায়রা লিয়নে জরুরি অবস্থা জারি করল সেখানকার সরকার।
আপাত ভাবে ‘জম্বি’ এক কাল্পনিক ভূতূড়ে কাহিনির চরিত্র হলেও এক ধরনের মাদক সেবন করলে অনেক সময়ই মানুষ এমন আচরণ করে যার সঙ্গে কাল্পনিক জম্বির খুব বিশেষ ফারাক নেই। যা সেবনের পর হলিউড সিনেমার জম্বিদের মতোই আচরণ করতে থাকেন নেশাগ্রস্তরা। আর তাই এই মাদকের নাম জম্বি ড্রাগ (Zombie Drug)। আফ্রিকার সায়রা লিয়ন (Sierra Leone) দেশের বহু মানুষ ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে এই মাদকের কবলে। জম্বি ড্রাগ তৈরিতে অন্যান্য একাধিক জিনিসের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল মানুষের হাড়। তাই রাত নামলেই কবরে হানা দিচ্ছে মাদকাসক্তরা। চুরি করছে মৃতদেহ। পরিস্থিতির জেরে দেশের কবরস্থানগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও দেহ চুরিতে লাগাম টানা যাচ্ছে না। যার ফলে বাধ্য হয়েই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে দেশে।
এ প্রসঙ্গে সায়রা লিয়নের রাষ্ট্রপতি জুলিয়াস মাদা বায়ো বলেন, “মাদক দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহারের জেরে আমাদের দেশ বর্তমানে অত্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। মাদকের জেরে দেশে মৃত্যুহারও ভীষণভাবে বেড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই আমরা টাস্কফোর্স গঠন করেছি। মাদকাসক্তদের সহায়তায় পেশাদার কর্মীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।”
ঠিক কী হয় এই ধরনের মাদক সেবন করলে? জানা যাচ্ছে, অন্তত ৬ বছর আগে দেশে প্রথমবার এই মাদকের অস্তিত্ব নজরে আসে। যার নেশা কার্যত সম্মোহিত করে ফেলে মানুষকে। লাগাতার ঘুম, শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতা চোখে পড়তে শুরু করে। ঝিমুনি ভাব আসে এবং মস্তিষ্কের উপর সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়েই ঝিমোতে থাকেন তাঁরা। বর্তমানে আফ্রিকার এই দেশ কার্যত সম্পূর্ণরূপে এই মাদকের কবলে। মারাত্মক অপরাধীরা এই মাদকের ডিলার হয়ে উঠেছে। মাদকের বিপুল চাহিদা তৈরি হওয়ায় চাহিদা পুরণে হাজার হাজার কবর থেকে চুরি করা হচ্ছে মানব কঙ্কাল।
বিশেষজ্ঞদের তরফে জানা যাচ্ছে, এই ড্রাগের কবলে পড়ে মৃত্যুও অত্যন্ত ভয়ংকর। মাদকাসক্তের শরীরে হঠাৎ করেই ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়। ধীরে ধীরে তা গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা শুকিয়ে কাঠের মত শক্ত হয়ে যায়। চলে যায় মৃত্যুর কবলে। আরও বিপজ্জনক বিষয় হল এই মাদকের সামান্য ওভারডোজ হলেই মৃত্যু অবধারিত।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং ড্রাগের সাপ্লাই চেন রুখতে তদন্তের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে অভিযান চালাচ্ছে সেখানকার সরকার। জায়গায় জায়গায় খোলা হয়েছে নেশামুক্তি কেন্দ্র। এদিকে, সরকারের তরফে জরুরি অবস্থা জারির পর দেশের সাইক্রাইটিক হাসপাতালের প্রধান ডক্টর আবদুল জল্লহ বলেন, রাষ্ট্রপতির তরফে জরুরি অবস্থা লাগু করা একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও খারাপ আকার নিচ্ছে। সরকারি ভাগে এই মাদকের জেরে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ না করা হলেও বিবিসি সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাদক সেবনের জেরে অঙ্গ বিকল হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের সায়রা লিয়ন মনরোগ হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার ৪ হাজার গুণ বেড়ে গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.