সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মন্দিরের নাম শিবালা তেজ সিং। বয়স হাজার বছর তো বটেই। সামনে লম্বা দেউল, কারুকাজ করা সার দেওয়া স্তম্ভ, গর্ভগৃহের উপরের কতকটা পুরীর মন্দিরের মতো থাক থাক দেওয়া উঁচু স্থাপত্য দেখে কে বলবে এর ঠিকানা পাকিস্তানে। যদিও দিন কয়েক আগে এর ভিতরে ঢুকলে অবহেলার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যেত। পাক পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে এই শিবালয়টিই এই সেদিনও বিগ্রহ ছাড়া, ভক্ত ছাড়া, নিত্যপুজো আর পরিচ্ছন্নতা ছাড়া ধুলোমলিন হয়ে তালাবন্ধ অবস্থায় পড়েছিল।
তবে বুধবার একটু অন্যরকম ঘটনা ঘটল। দেখা গেল ঝকঝকে তকতকে করে পরিষ্কার করা হয়েছে মন্দির চত্বর। লোকসমাগমে জমজমাট চারপাশ। গর্ভগৃহের সামনে তৈরি হয়েছে হোমকুণ্ড। জ্বলছে যজ্ঞের আগুন। স্পষ্ট সংস্কৃত উচ্চারণে ভেসে আসছে মন্ত্রপাঠের সুর। চলছে গর্ভগৃহের দরজা খোলার তোড়জোড়। সেই দরজা যা গত ৩০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছিল। দেশভাগের পর যেখানে বার বার হয়েছে বিক্ষুব্ধ পাকিস্তানিদের হামলা। যখনই দেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তি বেধেছে, হামলার আঁচ লেগেছে এই মন্দিরের গায়ে। ভাঙা হয়েছে মূর্তি, স্থাপত্যও। বিশেষ করে ভারতে যখন বাবরি মসজিদের উপর হামলা চলছে, তখন বিক্ষুব্ধরা পালটা আক্রমণ চালিয়েছে এই শিবভূমেও। খুব স্বাভাবিকভাবেই তারপর থেকে ভক্তসমাগম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরে। তালা পড়ে গর্ভগৃহে। বুধবার সেই বন্ধ দরজাই দেশের হিন্দু ভক্তদের জন্য খুলে দিল পাকিস্তানের ইমরান খান সরকার।
[ আরও পড়ুন: মুখরক্ষায় জঙ্গি হাফিজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কোণঠাসা পাকিস্তানের ]
বুধবার রীতিমতো যজ্ঞ করে সমস্ত হিন্দু রীতি রেওয়াজ মেনে দরজা খোলা হয় শিয়ালকোটের শিবালা তেজ সিং মন্দিরের। তত্ত্বাবধানে হাজির ছিলেন স্বয়ং দেশের হিন্দু বিষয়ক উপসচিব ফারাজ আব্বাস। মন্দিরের চৌকাঠে নারকেল ফাটিয়ে, সেই জল দিয়ে চৌকাঠ ধুয়ে শিবালা মন্দিরের দরজা খোলেন তিনি। যজ্ঞে ঘৃতাহুতিও দেন। পরে বলেন, নারকেল ফাটিয়ে আদতে অনাবশ্যক দর্প চূর্ণ করেছেন তিনি। আগুনে ঘৃতাহুতিতে আহুতি দিয়েছেন অযথা অহংবোধের। আর এসব কিছুই করেছেন সম্প্রীতির লক্ষ্যে।
সম্প্রীতির লক্ষ্যেই পাকিস্তানের ইমরান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্ত মন্দির নতুন করে খুলে দেওয়া হবে হিন্দু ভক্তদের জন্য। শুধু তাই নয়, প্রাচীন মন্দির এবং দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শিবালা মন্দির স্থাপত্যের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নিয়েছে পাক সরকার। এব্যাপারে লাহোরের শ্রী গঙ্গারাম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিলিতভাবে মেরামতির কাজও শুরু করতে চলেছে তারা। উল্লেখ্য, দেশভাগের কিছুদিন পর এই শিবালা তেজ সিং মন্দিরে নতুন শিবের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিল পাকিস্তানের নতুন সরকার। তার ৭২ বছর পর পাক সরকারের তরফে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার শিবালা তেজ সিং রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে পদক্ষেপ করা হল।
শিবালা তেজ সিং মন্দিরটি ঠিক কোন সালে প্রতিষ্ঠা হয় সেব্যাপারে বিশেষ তথ্য পাওয়া না গেলেও যে তেজ সিংয়ের নাম ওই মন্দিরের সঙ্গে জোড়া হয়েছে, তিনি উনবিংশ শতাব্দীর শিখ সাম্রাজ্যের সেনাধিপতি ছিলেন। ১৭৯৯ সালে শিখ সম্রাট মহারাজা রণজিৎ সিং লাহোর দখলের পর যে শিখ খালসা সেনাবাহিনী তৈরি করেন, সেই বাহিনীর একসময়ে দায়িত্বে ছিলেন এই তেজ সিং। সম্ভবত তিনি মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে কোনও বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাই তাঁর নামেই মন্দিরের নামকরণ করা হয় বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
[ আরও পড়ুন: দাউদ পাকিস্তানেই, এবার ইসলামাবাদের মুখোশ খুলে দিল আমেরিকা ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.