সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বড়সড় ধাক্কা। একেবারে ছন্নছাড়া দশা পাকিস্তান প্রশাসনের। চূড়ান্ত ধন্দ তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। ফের সেনা-প্রশাসন সংঘাতের পরিস্থিতি। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মঙ্গলবার ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানে জঙ্গিমৃত্যুর খবর পাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আর সেই বৈঠকের ছবি থেকেই স্পষ্ট, জোর ধাক্কা খেয়েছে পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য সেনা আধিকারিকদের শরীরী ভাষায় স্পষ্ট, এত বড় আঘাতের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তাঁরা। সকলের মুখে হতাশায় ভরা। যদিও পাক বিদেশমন্ত্রক থেকে জারি করা বিবৃতিতে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির কোনও প্রশ্নই আসে না।
পুলওয়ামা হামলায় বারবার জইশ-ই-মহম্মদের নাম উঠে আসে এবং পাকিস্তানের প্রশ্রয়ে মাসুদ আজহারের মতো কুখ্যাত জঙ্গির এত বাড়বাড়ন্ত বলে অভিযোগ তোলে ভারত। আন্তর্জাতিক সমর্থনও পেয়েছে। এসবের পর নড়েচড়ে বসে ইমরান খান বিবৃতি দিয়েছিলেন, ‘প্রমাণ ছাড়া কথা বলছে ভারত। প্রমাণ পেলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারতে সামনে নির্বাচন। পুলওয়ামা হামলার দায় পাকিস্তানের উপর চাপানোকে নির্বাচনী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আঘাত করলে, প্রত্যাঘাতও করবে পাকিস্তান।’ সোমবারই আবার তাঁর আবেদন ছিল, ‘একটা সুযোগ দেওয়া হোক শান্তি স্থাপনের।’ কিন্তু পুলওয়ামার হামলার ঠিক ১২ দিনের মাথায় ভারতীয় বায়ুসেনার এত বড় আঘাত কার্যত চুপ করিয়ে দিয়েছে তাঁকে। পাঠান স্যুট এবং কালো চামড়ার জ্যাকেটে আঘাত ঢাকার চেষ্টা করলেও মুখে তা মোটেই ঢাকতে পারলেন না ইমরান। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে তাঁকে অসহায় দেখাচ্ছিল। সামনে খাঁকি এবং ধূসর উর্দি গায়ে বসে থাকা সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের মুখও একইরকম থমথমে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, পাক সংসদে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ার পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত হতে চলেছে ইমরান খানের। ভারতের প্রতি শান্তির বার্তা পাঠিয়ে তিনি সেনাবাহিনীর রোষের মুখে পড়েছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রীর এই ভূমিকা যথারীতি ক্ষুব্ধই করেছে পাক সেনাকে। একইসঙ্গে সামনে আসছে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে পাক প্রশাসনের দ্বিচারিতাও। বিদেশমন্ত্রকের দাবি, কোনও হামলা হয়নি। ভারতীয় বিমান ফিরে গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির কোনও প্রশ্নই নেই। আবার বৈঠকে বসে ইমরান খানের বার্তা, ‘যখন, যেখানে খুশি, আমরা পালটা জবাব দেব।’
[চাপের মুখে সুর বদল, মোদির কাছে একটা ‘সুযোগ’ চাইলেন পাক প্রধানমন্ত্রী]
দেশের অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনও রকম অস্থিরতায় পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থান কিম্বা অভ্যুত্থানের চেষ্টা বরাবরের ঘটনা। ক্ষমতার প্রতি পাক সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের কথা জানে গোটা বিশ্ব। গণতান্ত্রিক প্রশাসনের সামান্য অশান্তির আঁচ পেলেই সেনাবাহিনী নিজের হাতে ক্ষমতা পেতে তৎপর হয়ে ওঠে। ভারতের তরফে দ্বিতীয় সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরও কি তেমন পরিস্থিতি হতে চলেছে? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পাকিস্তানের অন্দরে। তা যদি সত্যি হয়, তাহলে পাকিস্তানে ফের বিপন্ন হবে গণতন্ত্র। ফের সেখানকার ক্ষমতার রাশ যাবে সেনাবাহিনীর হাতে। এবং আরও প্রশ্রয় পাবে জঙ্গিবাহিনী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.