সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পেজার বিস্ফোরণে রক্তাক্ত লেবানন। উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলের পকেটেই দুমদাম করে ফেটেছে পেজার। সেদেশের জঙ্গি সংগঠন হেজবোল্লাকে টার্গেট করে এই হামলা চালানো হয়েছে। আর এর মাথায় রয়েছে ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ! এমনই অভিযোগ তুলছে লেবানন, ইরান। এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সিরিয়ার কিছু জায়গাতেও। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২। আহত ৪ হাজার ছুঁইছুঁই। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পেজার নিয়ে নানা কৌতুহল বেড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার মোবাইল ফাটবে না তো?
মঙ্গলবার দুপুর তখন সাড়ে তিনটে। হঠাৎই লোকজনের পকেটে বিস্ফোরণ শুরু হয়। দুমদাম করে ফাটতে থাকে পেজার। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সকলে। এই ঘটনায় হেজবোল্লা জঙ্গিদের পাশাপাশি আহত হন বহু সাধারণ মানুষ। বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছেন ইরানের রাষ্ট্রদূতও। এর পরই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে ইজরায়েলকে। সূত্রের খবর, প্রায় ৫ মাস আগে হেজবোল্লা গোষ্ঠী তাইওয়ান থেকে ৫ হাজার পেজার আনিয়েছিল। অভিযোগ, সেগুলোতে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেয় মোসাদ। আর এদিন পরিকল্পিতভাবে সবগুলোতে একত্রে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এতেই সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। এবার মোবাইলের পালা নয় তো? যা হাতে কিংবা পকেটেই ফাটবে! মোবাইলের সঙ্গে কী পেজারের কোনও যোগ রয়েছে? পেজার আসলে একটি ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস। যার সঙ্গে মোবাইলের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি মূলত সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠাতে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ পেজার বেস স্টেশন রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে মেসেজ গ্রহণ করে। যখন পেজারে কোনও বার্তা আসে, তখন এতে শব্দ হয়। ডিভাইসটির ছোট স্ক্রিনে সেই বার্তা দেখা যায়। পেজারের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এতে লোকেশন ট্র্যাক করা যায় না। তাই ফোন ট্যাপিং থেকে বাঁচতে জঙ্গিরা এই যন্ত্র ব্যবহারেই প্রাধান্য দেয়।
কিন্তু মোবাইল আসার পর থেকে হারিয়ে যেতে থাকে পেজার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার কমে যেতে থাকে। কিন্তু লেবাননের এই ঘটনায় শিরোনামে উঠে এসেছে স্মৃতি থেকে প্রায় মুছে যাওয়া সেই পেজার। এই যন্ত্রেই এমন ধারাবাহিক বিস্ফোরণের উদ্বিগ্ন বিশ্ব। যদিও এই ঘটনা নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি ইজরায়েল। এই মুহূর্তে বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পাশাপাশি ইজরায়েলকে লড়াই করতে হচ্ছে লেবাননের হেজবোল্লা, ইয়েমেনের হাউথিদের বিরুদ্ধে। সংঘাতে জড়িয়েছে ইরানও। এবার আর সমরাস্ত্র নয়, পেজারের মতো যন্ত্রকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে মোবাইলও যে যুদ্ধের অস্ত্র হয়ে উঠবে না, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না বিশেষজ্ঞ মহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.