সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সৌদি আরবের নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাশোগ্গিকে সৌদি আরবের দূতাবাসের মধ্যেই শিরচ্ছেদ করা হয়েছে বলে দাবি করল তুরস্কের প্রভাবশালী সরকারি সমর্থনপুষ্ট সংবাদমাধ্যম ইয়েনি সাফাক। সাফাকের এই দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে গোটা আরব দুনিয়ায়। এদিকে এই দাবি মিথ্যা ও ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু তুরস্ক সরকার বা সে দেশের প্রেসিডেন্ট জোসেফ তায়িপ এরদোগান এখনও এ ব্যাপারে মুখ খোলননি। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি তুরস্কে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস।
[ভারতের পালটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের হুঁশিয়ারি দিল পাকিস্তান]
বুধবার তুরস্কের ওই জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সংবাদপত্র দাবি করেছে তাদের হাতে অকাট্য প্রমাণ হিসাবে রয়েছে একটি অডিও টেপ। তারা জানিয়েছে, খাশোগ্গিকে অত্যাচার করার ভয়ানক বর্ণনা ও কথোপকথন রয়েছে ওই টেপে। তারা নিশ্চিত হওয়ার পরই দায়িত্ব নিয়েই খবরটি প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ৬০ বছরের প্রবীণ সাংবাদিক খাশোগ্গি ওয়াশিংটন পোস্টের একজন নামী কলামিস্ট। অতীতে সৌদি রাজপরিবারের দুর্নীতি ও কেচ্ছা নিয়ে তিনি অনেকবার কলম ধরেছিলেন। তাঁকে খুন করার হুমকি দিচ্ছিল কিছু মৌলবাদী ইসলামিক গোষ্ঠী।
সংবাদপত্র ইয়েনি সাফাক জানিয়েছে তাঁকে অপহরণ করার পর কয়েক দিন ধরে ঠান্ডা মাথায় ভয়ানক অত্যাচার করা হয়েছিল। তিনি যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছিলেন। পেন কিলার দিয়ে অত্যাচারের মাত্রা বাড়ানো হয়। তাঁকে টানা জেরা করছিল অপহরণকারীরা। তারপর দু’টি হাতের একটি একটি করে আঙুল কেটে ফেলা হচ্ছিল। নখও উপড়ে নেওয়া হচ্ছিল। সবশেষে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়। এই বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটানো হয় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের রীতি মেনে। কিন্তু পুরো ঘটনার পিছনে সৌদি আরবের সরকারের মদত রয়েছে। এটি কোনও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর কাজ নয়। এমনটাই দাবি তুরস্কের খবরের কাগজটির। খাশোগ্গির দেহ লোপাট করা হয়েছে। তাঁর হাতে ছিল অ্যাপলের স্মার্ট ওয়াচ। অত্যাচারের আগে সেটি খুলতে ভুলে গিয়েছিল মুখোশধারী অপহরণকারীরা। সেই স্মার্ট ওয়াচেই রেকর্ড হয়ে যায় অত্যাচারীদের কথা এবং অত্যাচারের ঘটনাগুলি। এটি কোনওভাবে চলে এসেছে ওই সংবাদপত্রের হাতে।
তুরস্কের পুলিশের দাবি, সৌদি আরব থেকে এসেছিল সামরিক গোয়েন্দাদের ১৫ জনের একটি গোপন দল। এরা উঠেছিল ইস্তানবুলে সৌদি কনসুলেটে। সেখানেই আগে থেকে এনে রাখা হয়েছিল অপহৃত খাসোগিকে। টানা জেরার পর তাঁকে সেখানেই হত্যা করা হয়। তুরস্কে তাঁর প্রেমিকাকে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রৌঢ় খাশোগ্গি। এরপর তাঁকে নিয়ে যেতেন সৌদিতে নিজের বাড়ি। সেই উপলক্ষ্যে হবু স্ত্রীর ভিসার আবেদন জমা দিতে নথিপত্র-সহ গিয়েছিলেন ইস্তানবুলের সৌদি কনসুলেটে। কিন্তু কনসুলেটে ঢুকে আর বের হতে পারেননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স আবদুল আজিজ সলমনকে ফোন করে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায় যে খাশোগ্গির হত্যার ঘটনায় সৌদি সরকার জড়িত, তাহলে তিনি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ‘ভয়ঙ্কর শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা নেবেন। সেই শাস্তি সামরিক ব্যবস্থা বা আর্থিক নিষেধাজ্ঞাও হতে পারে। এমন ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। কিন্তু কোনও দেশের সরকার কোনও সাংবাদিককে এরকম ভয়ঙ্করভাবে হত্যা করেছে তার নজির সম্প্রতি নেই। এমনকী কোনও দূতাবাসের মধ্যে ঠান্ডা মাথায় কোনও সাংবাদিকের শিরচ্ছেদ করা হচ্ছে, এমন উদাহরণও বিরল। তাই তুর্কি কাগজের দাবি ও খবর সত্যি হলে আরব দুনিয়ায় রাজনৈতিক সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
[সর্বাধিক ভোটে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত ভারত]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.