সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পর্দাপ্রথা সরিয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হতে এবার এক মহিলাকেই নির্বাচিত করল সৌদি প্রশাসন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সৌদি রাষ্ট্রদূত হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করছেন প্রিন্সেস রিমা বিন বান্দার। এর আগে এই পদে ছিলেন সৌদি রাজপরিবারের ছোট ছেলে খালিদ বিন সলমন। কিন্তু সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগ্গি হত্যাকাণ্ডের পর নিজেদের জালে নিজেরাই জড়িয়েছে সৌদি প্রশাসন। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই মুহূর্তে তাঁদের কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। তা ঠিক করতেই রিমা বিনকে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
গত অক্টোবরে ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে খুন হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা করে চক্ষুশূল হয়েছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে খুন হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। দীর্ঘদিন সৌদি প্রশাসন এই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, তা প্রকাশ্যে চলে আসে। তুরস্কের দূতাবাস থেকেই সিসিটিভি ফুটেজ-সহ একাধিক তথ্য প্রমাণ তুলে সৌদি প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। স্পষ্ট হয়ে যায়, ইস্তাম্বুলের দূতাবাসের ভিতরে খাশোগিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সৌদির এজেন্টরাই তাঁকে খুন করে। এনিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে হইচই রব উঠতেই মার্কিন প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেয়। জনপ্রিয় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মহম্মদ বিন সলমন সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা শুরু হওয়ায় দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়। আন্তর্জাতিক মঞ্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাঘা বাঘা প্রশাসনিক কর্তাদের কাছ থেকে এবার জটিল আইনি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে সৌদি আরবকে। আর সেসব সামলাতেই নিয়োগ করা হল রিমা বিনকে। পারিবারিক সূত্রে যাঁর আন্তর্জাতিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। রিমার বাবাও একসময়ে ছিলেন সৌদির রাষ্ট্রদূত।
[আইএস-এর মোহভঙ্গ, মায়ের কাছে ফিরতে চায় ‘জেহাদি জ্যাক’]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ক্রিশ্চিয়ান উলরিকসেনের মতে, ‘এই নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের পিছনে আমেরিকার সঙ্গে সৌদি আরবের চিড় ধরা সম্পর্ক মেরামত করিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যই প্রকট। বিশেষত খাশোগ্গি হত্যার পর তাঁদের যে পরিস্থিতি হয়েছে, তা দ্রুত ঠিক করতে চায় সৌদি। তবে এই মুহূর্তে এটা মুশকিলের ব্যাপার।’ এর আগে রিমা দেশের ক্রীড়ামহলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। খেলার মাঠে আরও মেয়েদের বেশি করে যোগদান করানোর লক্ষ্যে রিমার প্রচার অভিযান বেশ সাফল্যের মুখ দেখেছিল। এছাড়া পেশায় আইনজীবী রিমা দীর্ঘসময়ে দেশের মাটিতে একাধিক আইনি লড়াইয়ে হাত পাকিয়েছেন। যে প্রয়াস আবার তৎকালীন সৌদি আরবে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিল। তবে সেসব দিন অতীত। আরব দুনিয়া বেশ টের পেয়েছে, নারী ক্ষমতার দিক থেকে পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে তো নয়ই, বরং এগিয়েই। তাই এবার বিদেশি শক্তির সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে এক মহিলাকেই বেছে নিল সৌদি প্রশাসন। দেশের নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ঘটনায় অবশ্য অনেকেই মহম্মদ বিন সলমন প্রশাসনের প্রশংসাই করেছে। এবার শুরু হচ্ছে রিমা বিন বান্দারের নতুন লড়াই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.