সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে তলানিতে ঠেকেছে ভারত-চিন সম্পর্ক। লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চোখ রাঙাচ্ছে লালফৌজ। বহুবার এই অঞ্চলগুলো নিজেদের বলে দাবি করেছে বেজিং। যা মোটেই ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি। এহেন পরিস্থিতিতে মিউনিখে কিছুক্ষণের জন্য চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে সাক্ষাৎ হল বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের।
মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে জার্মানি যান জয়শংকর। ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য দেশের বিদেশমন্ত্রী ও সচিবরাও। শনিবার এই সম্মেলনেই জয়শংকরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ওয়াং ই-র। তবে তাঁদের আলাপচারিতা হয় মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য। জানা গিয়েছে, একটি আলোচনায় যোগ দিতে সভাকক্ষের পোডিয়ামের দিকে যাচ্ছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। সেসময় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ওয়াং ই-র সঙ্গে। দুজনেই সৌজন্য বিনিময় করেন। একপ্রস্থ কথাও সেরে নেন তাঁরা। তবে জানা যায়নি ঠিক কী নিয়ে ওইটুকু সময় তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের সীমান্তে চলতে থাকা অবিশ্বাস ও হিংসার পরিবেশে এই আলোচনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ছয় মাস ধরে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীর মধ্যে কোনও কথা হয়নি। গত বছর জুলাই মাসে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম (এআরএফ)-এর নানা দেশের মন্ত্রীদের জন্য আয়োজিত বিশেষ বৈঠকে শেষবার কথা হয় দুজনের। ফলে দীর্ঘ সময় পর তাঁদের এই সাক্ষাৎ ইতিবাচক বলেই ধারণা। মনে করা হচ্ছে, ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা কমিয়ে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে দুই বিদেশমন্ত্রীর কথা হয়ে থাকতে পারে।
বলে রাখা ভালো, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই লন্ডন থেকে চিনকে হুঙ্কার দিয়ে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সাফ জানিয়েছিলেন, গালওয়ান সংঘর্ষের পর চিন বুঝতে পেরেছে, ভারত দুর্বল দেশ নয়। ভারতকে চোখ রাঙিয়ে চলে যাওয়া আর সহজ নয়। দক্ষিণ চিন সাগরে লালফৌজের আগ্রাসান, নতুন মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশকে নিজের বলে দাবি করা, এরকম একাধিক বিষয়ে যে বেজিংয়ের দাদাগিরি নয়াদিল্লি মেনে নেবে না তা আরও একবার স্পষ্ট দিয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় (Galwan Valley) মুখোমুখি হয় ভারত (India) ও চিনের ফৌজ। দুপক্ষের জওয়ানরাই লোহার রড ও কাঁটাতার জড়ানো হাতিয়ার নিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা লড়াই করেন। রক্তক্ষয়ী সেই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। ১৯৭৫ সালে পর সেবারই প্রথম প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কার্যত যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত করতে কয়েক দফা আলোচনায় বসে দুই দেশের সেনাবাহিনী। তাতে আঁচ কিছুটা কমলেও উত্তেজনা কমেনি। এহেন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের জুলাই মাসের পর জয়শংকর ও ওয়াং ই-র কথোপকথন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.