রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিন সফরে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। বেজিংয়ে তিনি বৈঠক করেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে। কথা বলেন, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। দুদেশের সম্পর্ক বেনজির পর্যায়ে পৌঁছেছে জানিয়ে ‘বন্ধু’ চিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন লাভরভ। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ আবহে নতুন রণকৌশল নিয়েও দুদেশের মধ্যে কথা হয়ে থাকতে পারে। পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমণের ধার বাড়াতে বেজিংয়ের থেকে সামরিক সাহায্যও চাইতে পারে মস্কো। এদিকে, মস্কো-বেজিংয়ের এহেন দহরম মহরমে সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত।
এএনআই সূত্রে খবর, ৮ ও ৯ এপ্রিল দুদিনের বিদেশসফরে চিনে গিয়েছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী। সোমবার তিনি বেজিংয়ে পা রাখেন। মঙ্গলবার দেখা করেন ওয়াং ই-এর সঙ্গে। তাঁদের এই বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, রাশিয়ায় জঙ্গি হামলা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। বৈঠকের পর লাভরভ জানান, “পশ্চিমের আগ্রাসনে অস্তিত্ব সংকট তৈরি হয়েছে। এই আবহে নির্বাচন হয়েছে আমাদের দেশে। ভোটপ্রক্রিয়া চলাকালীন ইউক্রেনের জঙ্গিরা কিয়েভ থেকে হামলা চালিয়েছে। হ্যাকাররা ইলেকশন সিস্টেম হ্যাক করার অসংখ্যা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সকলের সব প্রচেষ্টায় জল ঢেলে আমাদের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিগত কয়েকদিনে রাশিয়ার বুকে হামলার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। যাতে বিপন্ন হচ্ছে নাগরিকদের জীবন।”
রাশিয়া ও চিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিয়ে লাভরভ বলেন, “চিনকে অসংখ্য ধন্যবাদ। চিন সবসময় আমাদের সার্বভৌম অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকদের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে।” এর পর বিবৃতি দিয়ে রুশ বিদেশমন্ত্রী জানান, রাশিয়া ও চিনের মধ্যে ব্যাপক অংশীদারিত্ব ও কৌশলগত আলাপচারিতা বেনজির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
এই বৈঠকের পর চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, “রাশিয়া-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে আলোচনা হয়েছে দুদেশের মধ্যে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা মতামত বিনিময় করেছেন। ইতিমধ্যেই দুদেশের কূটনৈতিক বোঝাপড়ার ৭৫ বছর অউরন হয়েছে। এই সম্পর্ক আগামিদিনে আরও দৃঢ় হবে।”
আগেই জল্পনা ছিল আগামী মে মাসে চিন সফরে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার আগেই চিনে পা রেখেছেন লাভরভ। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার করতে বেজিংয়ের থেকেও সাহায্য চেয়ে থাকতে পারে রাশিয়া। এর আগে আমেরিকাকে চাপে ফেলতে উত্তর কোরিয়া ও চিনের সঙ্গে যৌথ নৌ-মহড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল মস্কো। কারণ যুদ্ধের ময়দানে মস্কোর উপর চাপ বাড়াচ্ছে হোয়াইট হাউস। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে কিয়েভকে সাহায্য করছে ওয়াশিংটন। এই প্রেক্ষিতে আমেরিকা-বিরোধী দেশগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চাইছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
বলে রাখা ভালো, গোটা ঘটনা প্রবাহের উপর নজর রাখছে ভারত। চৈনিক চালে মস্কোর সঙ্গে দিল্লির সময় পরীক্ষিত বন্ধুত্বে কি ফাটল ধরবে? উঠছে এমন প্রশ্নও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, লাদাখে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত নিয়ে ভারতকে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছিল রাশিয়া। সরাসরি জিনপিং প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি ক্রেমলিন। ফলে ভবিষ্যতে কোনও দিন লাদাখে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে কয়েক দশকের বন্ধুকে পাশে পাবে কিনা দিল্লি রয়েছে সংশয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.