সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিষাক্ত রাসায়ানিক গ্যাসের হামলা চালানোয় দুনিয়াজুড়ে যখন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বইছে তখন তাঁকে বাঁচাতে আসরে নামল রাশিয়া৷ রাশিয়ার ব্যাখ্যা, ইদলিব প্রদেশের খান শেখুঁ এলাকায় জঙ্গিদের অস্ত্রভাণ্ডারেই ছিল রাসায়নিক অস্ত্র৷ প্রেসিডেন্ট আসাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি সেনার বিরুদ্ধে সেগুলি ব্যবহার করার জন্য মজুত রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু তার আগেই সেগুলি বোমা ফেলে ধ্বংস করে দেয় সিরিয়ার বিমানবাহিনী৷ রাসায়ানিক অস্ত্র ও বোমার গুদাম ঘরটি বিমান হামলায় ধবংস হয়৷ তখনই তীব্র বিস্ফোরণে উড়ে যায় রাসায়ানিক অস্ত্রগুলি৷ বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে৷ মৃত্যু হয় নিরীহ মানুষের৷ এজন্য প্রেসিডেন্ট আসাদ দায়ী নন৷ সিরিয়ার বিমানবাহিনীও রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়নি৷
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রক দাবি করেছে, সিরীয় জঙ্গিরাই যে গোপনে বিপুল পরিমাণে রাসায়নিক অস্ত্র মজুত করেছিল তার প্রমাণ মিলেছে৷ প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আমেরিকা ও পশ্চিমী শক্তির মদতপুষ্ট বিদ্রোহীবাহিনী ছ’বছর ধরে লড়াই চালাচ্ছে৷ তারাই মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী৷
অন্যদিকে, রুশ সাফাই এবং প্রেসিডেন্ট আসাদের দায়সারা বিবৃতিকে আমল দিচ্ছে না রাষ্ট্রসংঘ৷ আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন-সহ নিরাপত্তা পরিষদের সব দেশ আসাদকেই কাঠগড়ায় তুলেছে৷ তাঁকে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী’ হিসাবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের জন্য তোলার দাবি উঠেছে৷ কারণ এর আগে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট ঘোউতা প্রদেশে বিষগ্যাস প্রয়োগ করে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল আসাদের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ, সুন্নি মতাবলম্বী বিদ্রোহীবাহিনীর (সৌদি আরব ও আরব দেশগুলির মদতপুষ্ট) সমর্থকদের খতম করতে প্রায়ই সারিন ও ক্লোরিন নামের মারাত্মক বিষগ্যাস প্রয়োগ করার নির্দেশ দেন আসাদ৷ আসাদ নিজে শিয়া মতাবলম্বী৷ আসাদকে সবরকমভাবে মদত দেয় রাশিয়া ও ইরান৷ এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেণ্ট ট্রাম্প এক আক্রমণাত্মক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আসাদের মতো যুদ্ধাপরাধীর বাড়বাড়ন্তই প্রমাণ করে ওবামা প্রশাসন কত দুর্বল ছিল৷ ওবামার নিষ্ক্রিয়তার জন্যই আসাদ রাসায়নিক হামলা চালিয়ে পার পেয়ে গিয়েছেন৷
এদিকে, পশ্চিমী দেশগুলির দাবি উড়িয়ে দিয়ে সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রক দাবি করেছে, “আমরা কোনওদিন কখনও কোথাও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করিনি৷ করবও না৷ এটা অপপ্রচার চলছে৷ বিদ্রোহীবাহিনীই এই অস্ত্র মজুত করেছিল, তা ধ্বংস করা হয়েছে৷” লন্ডনভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি কাউন্সিল এবং রেড ক্রস জানিয়েছে, মঙ্গলবারের হামলায় ২০ জন শিশুসহ কমপক্ষে ৭২ জন মারা গিয়েছেন৷ এদের কেউ মুখে গ্যাঁজলা উঠে, কেউ নাকে, চোখে মুখে রক্ত উঠে, দমবন্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে মারা গিয়েছেন৷ এখনও চিকিৎসাধীন পাঁচশোর বেশি মানুষ৷ তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সিরিয়ার পতাকার রং দিয়ে আঁকা সিরীয় বিমানবাহিনীর মিগ যুদ্ধবিমানগুলি গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ কার্পেট বম্বিং করে খান শেখুঁ ও আশপাশ এলাকায়৷ বোমবর্ষণের মিনিট তিনেকের মধ্যে বিষগ্যাসের প্রভাবে মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন৷ গন্ধ ও বর্ণহীন সারিন গ্যাসের প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্র বিকল হয়ে মাটিতে পড়ে যান শতাধিক শিশু ও মহিলা৷ রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গিতেরেস ক্ষুব্ধ হয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, সিরিয়াতে যা চলছে তা যুদ্ধাপরাধ৷ মানবতার লজ্জা৷ এর এখনই বিহিত করতে হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.