সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শ্বেতশুভ্র তুষারের মতোই সফেদ লোমে ঢাকা গা। মাঝে পুঁতির মতো কালো দুটি চোখ। মেরু ভাল্লুক বলতে এই চেহারাই ভেসে ওঠে চোখের সামনে। তুলতুলে নরম চারপেয়েদের ছবি দেখলে পশুপ্রেমীদের অনেকেরই মনে হয়, আহা! সামনে যদি দেখতে পেতাম। সাইবেরিয়া কিম্বা অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের বরফের দেশে তাদের বসবাস, একাকী। কারণ, ওই এলাকা তাদেরই। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। কিন্তু সম্প্রতি তাদের বাসস্থান, পরিবেশে অনেক বদল হয়েছে। গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। সেসব পেরিয়ে হিমশীতল জায়গা থেকে শ্বেত চারপেয়েরা ঢুকে পড়ছে সংলগ্ন লোকালয়। স্বভাবজাত হিংস্র প্রাণিগুলো হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী। তা সত্বেও মেরু ভাল্লুক নিধনে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে রুশ প্রশাসন।
সম্প্রতি উত্তরপূর্ব রাশিয়ার নোভায়া জেমলিয়া অঞ্চলে মেরু ভাল্লুকদের হামলা বাড়ছে। এই দ্বীপাঞ্চলটি মেরু প্রদেশ সংলগ্ন। প্রায় ৩০০০ মানুষের বাস। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, হিংস্র ভাল্লুকরা যে কোনও বাড়ি বা বদ্ধ জায়গা দেখলেই ঢুকে পড়ছে। তারপর শুরু হচ্ছে তাণ্ডব। তীব্র ধারাল দাঁতের এক কামড়েই রক্তাক্ত করে ফেলছে মানুষকে। দিনের পর দিন তাদের উপদ্রব বাড়ছে বই কমছে না। একবার একসঙ্গে প্রায় ডজনখানের মেরু ভাল্লুক একসঙ্গে ঢুকে পড়েছিল লোকালয়ে। দিনে হোক বা রাতে, মেরু ভাল্লুকের হামলার ভয়ে রীতিমতো সিঁটিয়ে রয়েছেন নোভায়ার বাসিন্দারা। স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘ডিসেম্বর থেকে ওদের যাতায়াত বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৮টি মেরু ভাল্লুক লোকালয়ে চলে আসে। খাবারের জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। সেইসঙ্গে মানুষের ওপরও হামলা চালায়। আমরা বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছি। এমনকী ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও আতঙ্কে ভুগছি। কখন ওরা কার উপর হামলা করে।’
দুর্ঘটনার পর স্টিয়ারিং থেকে সরার সিদ্ধান্ত, লাইসেন্স জমা প্রিন্স ফিলিপের
স্থানীয় প্রশাসনও এনিয়ে উদ্বিগ্ন। একমাত্র সমাধান হিসেবে তাঁরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থে আক্রমণকারী মেরু ভাল্লুকদের লোকালয়ে দেখলে, গুলি করে মেরে ফেলার অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে রুশ সরকার। জানানো হয়েছে, কোনও মেরু ভাল্লুককে হত্যা করা হবে না। রাশিয়ার অন্যতম দুর্লভ এবং বিশেষ সম্পদ এই মেরু ভাল্লুকের দল। তাই তাদের ওপর কোনওরকম আঘাত নয়। বিকল্প হিসেবে পুতিন প্রশাসন অবশ্য নোভালা জেমলিয়া দ্বীপের নাগরিক নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর সেনাবাহিনী, নিরাপত্তাবাহিনী। যারা মেরু ভাল্লুকের হামলা থেকে বাসিন্দাদের রক্ষা করবে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্বউষ্ণায়নের জন্য আর্কটিক বলয়ের বরফ গলছে। স্থান সংকুলান হচ্ছে সেখানকার একমাত্র বাসিন্দা মেরু ভাল্লুকদের। জীবনের তাগিদেই তাদের লোকালয়ে আগমন। এটাও অভিযোজনের একটা অংশ। রাশিয়ার নোভায়া জেমলিয়া দ্বীপে এখন বাস্তবিকই চলছে মানুষ আর মেরু ভাল্লুকের জীবনযুদ্ধ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.