সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাবার ইশারায় খেলত হিংস্র সব জন্তুজানোয়ার। আর তাদের নানা কীর্তিকলাপ সমান নৈপুণ্যে ক্যামেরাবন্দি করতেন ক্রোকোডাইল হান্টার। আন্তর্জাতিক মানের টেলিভিশন চ্যানেলে সেসব ধারাবাহিক শো কিংবা তথ্যচিত্র গোগ্রাসে গিলতেন সবাই। এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন নিশ্চই? বলছি স্টিভ আরউইনের কথা। অতি প্রিয় সামুদ্রিক প্রাণী স্টিং রে-র লেজের ঝাপটায় যাঁকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার স্টিফেন রবার্ট আরউইনের অসম সাহসিকতা আর কীর্তির কথা সর্বজনবিদিত। ঠিক যতটা তিনি জল-জঙ্গলের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিলেন, ঠিক ততটাই সংলিপ্ত ছিলেন পরিবারের সঙ্গে। এই প্রতিবেদন তাঁরই উত্তরসূরী রবার্ট আরউইনের। যিনি সম্পর্কে স্টিভের পুত্র। বয়স মাত্র ১৪ বছর। কিন্তু এই বয়সেই রবার্টের কাজকর্ম অনেককেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। বাবার মতো রবার্টও বন-জঙ্গলের জীবন কাটাতে ভালোবাসে। বাবার মতোই তার হাতের ছোঁয়ায়, মুখের কথায় যেন নিজেদের বন্যতা ভুলে যায় সিংহ, চিতা, বিষধর সরীসৃপরা। কাঁধে, কোলে, হাতে উঠে পড়ে কুমিরছানা বা গিরগিটির দল।
আর তখনই কিশোরের মেধাবী দৃষ্টি আর নিপুণ আঙুলের ক্লিকে বন্দি হয়ে যায় তারা। রবার্টের চোখে দেখা নানা প্রাণীর নানা ভঙ্গির সেসব ছবি বিকোয় হাজার, লক্ষ ডলারে। এই ১৪ বছরের ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবে রবার্টের নাম ছড়িয়েছে, ঝুলি ভরে উঠেছে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে। অনেকেই বলছেন, এই বয়সে কিশোর রবার্টের কাজ বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে তার বাবাকে। ঠিক যেভাবে স্টিভ ক্যামেরার সামনে বিপদ ভুলে, সাবলীলভাবে কুমিরের মুখগহ্বর খুলে হাত ঢুকিয়ে দিতেন, পরীক্ষা করতেন দাঁতের ধার।
কাটল অচলাবস্থা, ৩৬ দিন পর খুলছে মার্কিন কোষাগার
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে, রাগী শংকর মাছ যখন লেজের কাঁটা ফুটিয়ে দিয়েছিল স্টিভের ঠিক হৃদপিণ্ডের মাঝে, রবার্টের বয়স তখন মাত্র ১ বছর। বাবার হাত ধরে কিছু শেখার সুযোগ সে পায়নি। তুলনায় দিদি বিন্দি ছিল খানিক বড়। বছর ছয়েকের। সে বরং হিংস্রদের পোষ মানানোর কিছুটা কৌশল দেখেশুনে শেখার মতো একটা জায়গায় পৌঁছেছিল। তাই ছোট্ট রবার্টকে নিয়ে কিছুটা চিন্তা ছিল পশুপ্রেমী আরউইন পরিবারের। কিন্তু সেসব উদ্বেগ রবার্ট কাটিয়ে দিয়েছে নিজে থেকেই। তাকে শেখাতে হয়নি কিছু। জন্মগতভাবেই বন্যপ্রেমী সে। মাত্র ১৪ বছরেই রবার্ট নিজের দক্ষতায় অংশ নিয়েছে একাধিক জঙ্গল অভিযানে। একদিকে তার চোখ দিয়ে প্রকৃতির ছবি দেখতে এবং আরেকদিকে বেয়াড়া জানোয়ারকে ঠান্ডা করতে রবার্টকে দলে টেনেছেন অনেকেই। এই বয়সে এত খ্যাতিতে অবশ্য স্টিভপুত্রর মাথা ঘুরে যায়নি। এখন বাবার বার্তাই শোনা যায় তার গলায়। কিশোর রবার্ট বলতে চায় – ‘বন, জঙ্গল সাফ করে এদের জীবন বিপন্ন করে তুলবেন না। ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দিন। দেখবেন, রঙে, বৈচিত্র্যে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।’ তোমাকে অভিবাদন, রবার্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.