Advertisement
Advertisement

Breaking News

দুই শরিফের দ্বন্দ্বে পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মানতে নারাজ সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ৷

Rift between Pakistan government and army
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 7, 2016 9:43 am
  • Updated:October 7, 2016 10:08 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মহলে কোণঠাসা পাকিস্তান৷ উরির সেনাছাউনিতে জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমালোচনার মুখে ভোলবদল করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷ বেনজির হুঁশিয়ারি দিলেন দেশের সেনাবাহিনীকে৷

নওয়াজের বার্তা, হয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, নয়তো বাকি বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন৷ এমনকী, পাঠানকোট ও ২০০৮-এ মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ তবে তাঁর হুঁশিয়ারিতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ কারণ, পাক ভূখণ্ডে ‘সর্বশক্তিমান’ সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ জানিয়েছেন, ভারতকে উপযুক্ত জবাব দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত পাক সেনাবাহিনী৷ যে কোনও মুহূর্তে ভারতকে তাদের হামলার জবাব দেবে তারা৷ ভারত ক্রমাগত মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন৷

Advertisement

পাক সরকারের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সে দেশের নামী সংবাদপত্র ‘ডন’ জানিয়েছে, বুধবার একের পর এক বৈঠকে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শরিফ৷ প্রতিটি বৈঠকেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সচিব ছাড়াও সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর উচ্চপদস্হ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷ ছিলেন নওয়াজের ভাই তথা পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও৷ ‘ডন’-এর খবর, বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় সরকার ও সেনা, আইএসআই কর্তাদের মধ্যে৷ যা কার্যত নজিরবিহীন৷ এরপরই সেনাকে পাক সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে পাক সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা যেন তাতে নাক না গলায়৷ জঙ্গিদের মদত দেওয়া আর চলবে না৷ গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল রিজওয়ান আখতার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসির জানজুয়া প্রতিটি প্রদেশে গিয়ে সরকারের নির্দেশ সেনা ও গুপ্তচর সংস্থার কর্তাদের কাছে পৌঁছে দেবেন৷ পাঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন শরিফ৷ রাওয়ালপিন্ডির সেনা আদালতে মুম্বই হামলার বিচার ফের শুরু করতে বলেছেন তিনি৷

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের নির্বাচিত কোনও সরকারই সেনার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস দেখাতে পারেনি৷ নওয়াজ শরিফকেই ক্ষমতাচ্যুত করে মসনদ দখল করেছিলেন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশারফ৷ সেই শরিফ এমন উল্টো সুর গাইছেন কেন? বিশেষজ্ঞদের মত, যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে, যে কোনও সময় আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার আশঙ্কা করছে পাকিস্তান৷ সেক্ষেত্রে তাদের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে পড়বে৷ তাই কিছুটা সক্রিয় হয়ে আমেরিকা-সহ প্রথম সারির দেশগুলির রোষ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে তারা৷ ‘ডন’ জানিয়েছে, বৈঠকে শাহবাজের সঙ্গে আইএসআই-এর ডিজির রীতিমতো ঝগড়া শুরু হয়ে গিয়েছিল৷ যা থেকে স্পষ্ট, নওয়াজের দল কতটা ঝুঁকি নিয়ে সেনার সঙ্গে টক্কর নিতে চাইছে৷ এর ফলে যে কোনও সময় পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থান হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা৷

সবচেয়ে চমকে দিয়েছে পাক বিদেশসচিব আইজাজ চৌধুরির ভূমিকা৷ বৈঠকে সেনা ও অসামরিক কর্তাদের সামনে তিনি একটি প্রেজেন্টেশন দেন৷ সেখানে দেখানো হয়েছে, উরি হামলার পর কীভাবে পাকিস্তান দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে৷ তিনি আরও জানান, চিন আপাতত পাশে থাকলেও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাপ দিচ্ছে৷ তা না হলে ওরাও সরে যেতে পারে৷ পাক অনুরোধে মাসুদ আজহারকে জঙ্গি হিসাবে ঘোষণা ঠেকাতে ভেটো প্রয়োগ করছে চিন৷ কিন্তু এর যৌক্তিকতা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে৷ সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও আবেদনে বিশ্বের বৃহত্‍ শক্তিগুলি কান দিচ্ছে না৷ হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও তলানিতে চলে যাবে৷ জইশ-ই-মহম্মদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিলে ও পাঠানকোট হামলার সঠিক তদন্ত হলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে বলে জানান পাক বিদেশসচিব৷ প্রেজেন্টেশন শেষ হতেই আইএসআই ডিরেক্টর কী করণীয়, সে সম্পর্কে জানতে চান৷ আইজাজ চৌধুরির স্পষ্ট জবাব, “জইশ, মাসুদ আজহার, লস্কর-ই-তৈবা, হাফিজ সঈদ ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে৷” আইএসআই প্রধান রিজওয়ান আখতার প্রস্তাব দেন, প্রয়োজন হলে যে কোনও কাউকে সরকার গ্রেফতার করুক৷ দায় এড়ানো ও সেনা-সরকার চাপান-উতোর নিয়ে পাক আধিকারিকরাও দ্বিধাবিভক্ত৷ অনেকে মনে করছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভারতের কাছে নতিস্বীকার করা হবে৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চে একঘরে হওয়ার জন্য শরিফকেই দায়ী করছেন বিরোধীরা৷

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মানতে নারাজ সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ৷ বরং শরিফের নির্দেশে যাতে পাকিস্তানের সেনারা হতাশ না হয়, সেজন্য পাল্টা ভারতকেই হুমকি দিয়েছেন তিনি৷ জেনারেল রাহিল শরিফ জানিয়েছেন, ভারতকে উপযুক্ত জবাব দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত পাক সেনাবাহিনী৷ যে কোনও মুহূর্তে ভারতকে তাদের হামলার জবাব দেবে তারা৷ তিনি জানিয়েছেন, কাশ্মীর নিয়ে অযথা মিথ্যা কথা বলে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পেতে চাইছে ভারত৷ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক চাপের কাছে তাঁকেও অচিরেই মাথা নোয়াতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement