নন্দিতা রায়: ভারত-নামিবিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ইউরেনিয়াম আদান-প্রদান নিয়ে যে জটিলতা ছিল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামিবিয়া সফরে তা অনেকটাই মিটতে চলেছে৷ বিশ্বের সব থেকে বেশি ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে নামিবিয়া রয়েছে প্রথম সারিতেই৷ পারমাণবিক ক্ষেত্রে কাজের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ইউরেনিয়াম-এর চাহিদা রয়েছে ভারতে৷ নামিবিয়ার কাছ থেকে ইউরেনিয়াম পাওয়ার বিষয়ে ২০০৯ সালে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছিল৷ কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তা এতদিন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি৷ ভারত ইউরেনিয়ামকে শান্তিপূর্ণ কাজের জন্য ব্যবহার করবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ থাকলেও নামিবিয়ার নিজস্ব কিছু বাধ্য-বাধকতা থাকার কারণেই চুক্তি এতদিন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি৷ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মধ্যে ‘পেলিনদাবা’ চুক্তি রয়েছে, যেখানে নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি এমন দেশগুলিকে ইউরেনিয়াম সরবরাহকরার বিষয়ে বাধা দিয়েছে৷ নামিবিয়া অতীতে এই চুক্তি ভঙ্গ করতে রাজি হয়নি৷ নামিবিয়ার কাছ থেকে ইউরেনিয়াম পাওয়ার ক্ষেত্রে সবুজ সঙ্কেত না পাওয়া গেলেও ভারত ইতিমধ্যেই কাজাখস্তান, অস্ট্রেলিয়া-সহ প্রায় একডজন দেশের সঙ্গে ইউরেনিয়াম পাওয়ার বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ তাদের ছাড়াই যে ভারত নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে নিতে পারবে তা বুঝতে পেরেছে নামিবিয়া সরকারও৷ আর তাতে যে আখেরে নামিবিয়ারই লোকসান হবে সে কথা মাথায় রেখে ভারতকে ইউরেনিয়াম দেওয়ার ব্যাপারে তারা নতুন করে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে৷
নামিবিয়ার সঙ্গে ইউরেনিয়াম পাওয়ার বিষয়ে যে নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে তা কাটাতে ভারতের দূত হিসাবে প্রণববাবুই যে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ নিরস্ত্রীকরণ-এর বিষয়ে প্রণববাবুর নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে যা আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হয়েছে৷ তুখোড় রাজনীতিবিদ প্রণবের দৌত্য যে নামিবিয়াকে নতুন করে ভারতকে ইউরেনিয়াম দেওয়ার ব্যাপারে ভাবতে বাধ্য করবে তা আগেই অনুমান ছিল৷ বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন প্রণববাবুই প্রথম নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে ভারতের দায়বদ্ধতার কথা জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছিলেন৷ তাই এ বিষয়ে প্রণববাবুর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো ভারত সরকারের লক্ষ্য ছিল৷ আর তা সফল হয়েছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷
বুধবার রাতে ভারতীয় সময় সাড়ে এগারোটা নাগাদ প্রণববাবু নামিবিয়ার রাজধানী উইনধোকে আসেন৷ সেখানে রাজকীয় অভ্যর্থনার পরে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল দশটা নাগাদ নামিবিয়ার রাষ্ট্রপতি হেজ গ্রেনগরের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান৷ সেখানেও আফ্রিকার উপজাতিদের নাচগান-সহ রাজকীয়ভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাঁকে৷ দুই রাষ্ট্রপ্রধান নিজেদের বক্তব্য রাখেন ও প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনাও হয় সেখানে৷ ভারত ও নামিবিয়ার মধ্যে আধিকারিক স্তরে দু’টি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়৷ বন্ধ কামরার অন্দরে ইউরেনিয়াম-দৌত্যর পাশাপাশি প্রণববাবু এদিন ভারতের নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন না পাওয়ার বিষয় নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেন৷ এছাড়া, সীমান্তপারের সন্ত্রাস নিয়ে ভারত যে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় রয়েছে সেকথাও বলেন৷ ভাল ও খারাপ সন্ত্রাসবাদ বলে যে আলাদা কিছু হয় না তা তিনি বিশ্বাস করেন, সেকথা জোরের সঙ্গে জানান রাষ্ট্রপতি৷ সন্ত্রাসবাদের মতো সমস্যার মোকাবিলার জন্য আফ্রিকার দেশগুলির এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন৷ দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে এদিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক-সহ ভারত যে নামিবিয়াকে সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে সেকথাও জানিয়ে দেন প্রণববাবু৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি নামিবিয়ার সংসদের উচ্চকক্ষ ‘অ্যাসেমব্লি কাউন্সিল’-এ ভাষণ দেন৷ ভারতের মতোই নামিবিয়ার সংসদে ‘অ্যাসেমব্লি কাউন্সিল’ ও ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল’-দু’টি কক্ষ রয়েছে৷ সংসদের ভাষণে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশদে ব্যাখ্যা করেন রাষ্ট্রপতি৷ ভারত-নামিবিয়ার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক থেকে শুরু করে নামিবিয়ার স্বাধীনতা পাওয়ার দাবিতে ভারতের জাতিসংঘের কাছে সরব হওয়ার কথাও বলেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি গ্রেনগরের আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন প্রণববাবু৷ ভারত যে নামিবিয়ার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী রাষ্ট্রপতির ভাষণে সেই বার্তা বার বার উঠে এসেছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.