Advertisement
Advertisement
Corona virus

‘রিমোট ওয়ার্কিং’ মানে বাইরে আড্ডাবাজি নয়, সতর্ক করছেন প্রবাসী বাঙালিরা

গৃহবন্দি থাকলেই এড়ানো যাবে সংক্রমণ, পরামর্শ তাঁদের।

Remote working means not gossiping with friends, said a Indian
Published by: Soumya Mukherjee
  • Posted:March 22, 2020 12:01 pm
  • Updated:March 22, 2020 1:59 pm  

সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরি, ম্যানহাটন: এগারো বছর হয়ে গেল আমেরিকার প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটনে আমাদের আস্তানা। উইকএন্ড শুরু হয়েছে সবে, বোঝাই যাচ্ছে না। কারণ, জনমানবহীন ম্যানহাটন শেষ কবে দেখেছি, সেটা একটু চিন্তা করে বলতে হবে। ন’বছর আগে একটা ঘূর্ণিঝড় (স্যান্ডি) শহরটাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। তবু একটা পার্থক্য ছিল তখন। কাউকে গৃহবন্দি থাকতে হয়নি। করোনা ভাইরাস সেটাও করে দেখাল। শনিবার সকালে যখন চায়ের কাপ নিয়ে লেখাটা লিখতে বসেছি, সামনের জানলা দিয়ে দেখছি ধূসর অচেনা ম্যানহাটন। যেখানে এখন প্রতিবেশীর গাড়িতে ময়লা জমছে। কারণ, আমরা এখানে দশ-বারোদিন হয়ে গেল ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি। বাচ্চাও স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে এখন স্টাডি ফ্রম হোম।

গত সপ্তাহের মাঝামাঝি হঠাৎ ম্যানহাটনবাসী কোভিড-১৯ নিয়ে মাথাব্যথা শুরু করল। শুরু হল প্যানিক পার্চেজ। এক থেকে দেড়ঘণ্টার মধ্যে ওয়ালমার্টের মতো বড় সুপারমার্কেট খালি হয়ে গেল। খুব কমন ওষুধ কিনতে গিয়েও সিভিয়ার ক্রাইসিস দেখলাম। স্কুল-কলেজে কারফিউ। হঠাৎ ফোন পেলাম স্কুল থেকে। বাচ্চার লকারের জিনিসপত্র খালি করে দিতে হবে। তখন স্কুল থেকে দু’তিন সপ্তাহ ছুটি বলা হয়েছিল। এখন সেটা এন্ড অফ এপ্রিল হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: থামছে না ইটালির মৃত্যু মিছিল, একদিনে মৃত ৭৯৩ জন ]

২০২০ অর্থবর্ষের ফার্স্ট কোয়ার্টার মার্চ মাসে শেষ হচ্ছে। তার মধ্যে হঠাৎ বিশ্ব-মহামারির আগমন। করোনা ভাইরাস( CoronaVirus) মার্কিন অর্থনীতির যে ক্ষতি করল, তা বলে বোঝানো যাবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোটা বছরের বাজেট তৈরি করার কথা ছিল এখন। সেটা আটকে গেছে। নিজে ব্যাংকিং পরিষেবায় আছি বলে জানি, বিমানসংস্থা বা হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে ভয়ংকর আকাল শুরু হতে চলেছে কিছুদিনের মধ্যে। কর্মী ছাঁটাই তার একটা দিক মাত্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি সংস্থা আধা স্যালারিতে কর্মীদের রাখছে। দু’দিন আগে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ‘হেল্পিং হ্যান্ড’ অ্যাপ চালু হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের লোকেশনে প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে আসছেন অ্যাপ কর্মীরা।

এখানে কিন্তু বাস, নিউইয়র্ক মেট্রো চলছে সবই। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন তাঁদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। আপৎকালীন পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ মানুষের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। আমি কলকাতায় বড় হয়েছি। ছোট থেকে বন্‌ধ, কারফিউ দেখেছি। অনেক রিপোর্ট পড়েছি। সমস্যা হল, আমেরিকার মানুষ এগুলো কিছুই দেখেনি। তাই ওরা জানেই না যে, এই পরিস্থিতি কীভাবে হ্যান্ডেল করবে! যে কারণে স্থানীয়দের কেনাকাটির লিস্ট দেখলেই মাথায় হাত পড়বে। তবে কিছুদিন ধরে দেখছি, করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা দেখার পর মানুষজনের টনক নড়েছে। সম্প্রতি চলে গেল সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে। অর্থাৎ আইরিশদের দুর্গাপুজো। সেই অনুষ্ঠানে একটা লোকও বেরোয়নি। আরও একটা জরুরি কথা বলি। শুনলাম, কলকাতাতেও ওয়ার্ক ফ্রম শুরু হয়েছে। রিমোট ওয়ার্কিং মানে কিন্তু অফিসের কাজ হয়ে গেলে বাইরে গিয়ে আড্ডাবাজি নয়। রেস্তরাঁয় গিয়ে খাওয়াদাওয়া নেভার। ম্যানহাটনে গত সপ্তাহেও লোকজন ডিনার করতে গিয়েছেন বাইরে। এখন শপিং মল, রেস্তরাঁ সব বন্ধ। মলগুলো দেখলে কেউ চিনতে পারবে না। শুনসান। এতগুলো কথা লিখতে লিখতে, কলকাতার নিজের মানুষগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। এখন সিচুয়েশন এতটাই কঠিন যে চাইলেও ওদের কাছে যেতে পারব না। ঈশ্বরের কাছে চাইব, আমরা যেন এই খারাপ সময়টাকে দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারি।’

[আরও পড়ুন: ‘টের পাচ্ছি, বিপদ কাকে বলে’, বলছেন করোনা কবলিত আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয়]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement