সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাশিয়ার আকাশে মেঘ৷ সেই মেঘ সরে সরে যাচ্ছে ইউরোপের দিকে৷ তবে তা সাধারণ মেঘ নয়৷ সিঁদুরে মেঘ দেখলেই যেমন ঘরপোড়া গরু ভয় পায়, তেমনই ওই ঘন কালো মেঘ দেখে বিপদ টের পেয়েছিলেন ইউরোপের বিজ্ঞানীরা৷ পরীক্ষানিরীক্ষা করে বোঝা যাচ্ছে, এই মেঘের উৎপত্তি তেজস্ক্রিয়তা থেকে৷ আর তা দেখেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাঁরা৷ সাধারণ মানুষ অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে রাশিয়ার সরকারি পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম থেকে লাগাতার তেজস্ক্রিয় রুথেনিয়াম-১০৬ নির্গত হচ্ছে৷ কিন্তু রাশিয়া বরাবর তা অস্বীকার করেছে৷ আর সেই তেজস্ক্রিয়তাই বায়ুতে মিশে মেঘের আকার নিচ্ছে৷ দিন দিন তা রাশিয়ার আকাশ থেকে সরে যাচ্ছে ইউরোপের দিকে৷ তবে জার্মান বিজ্ঞানী তথা গবেষক জর্জ স্টেইনহসারের ধারণা, রোসাটম থেকে অসাবধানতাবশতও কিছু তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছে৷ যা ওই মেঘকে আরও ভারী করে তুলছে৷ তিনি আরও বলছেন, ওই বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়৷ ক্ষতির আশঙ্কা তার চেয়ে ঢের বেশি৷
মূলত রুশ-কাজাখস্তান লাগোয়া চেলিয়াবিনস্ক এলাকাতেই সাধারণত তেজস্ক্রিয় পরীক্ষানিরীক্ষা করে থাকে৷ সেখানে মায়াক নামে একটি জায়গাই তেজস্ক্রিয় নির্গমনের উৎস বলে মনে করছেন গবেষকরা৷ যা কিনা মারাত্মক ক্ষতি করবে৷ জর্জ স্টেইনহসার বলছেন, ‘আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তেজস্ক্রিয় নির্গমনের খবর একেবারে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে৷ সাধারণ মানুষ সব জানতে পারছেন, আতঙ্কিতও হচ্ছেন৷ এই ঘটনায় দায় নিতে রাশিয়ার এই লাগাতার প্রত্যাখ্যান পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলছে৷ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি,অন্য কোনও পারমাণবিক চুল্লি থেকে এরকম অসাবধানতাবশত তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছে কি না৷’
এনিয়ে আরও জানা যাচ্ছে, অস্ট্রিয়া ২০১৭ সালেই রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ে৷ তারা সেসময়ই অস্বাভাবিক হারে এধরনের নির্গমন লক্ষ্য করেছিলেন৷ এমনও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল, রাশিয়ার এই ক্ষতিকর বিকিরণের প্রভাব পড়বে ইউরোপেও৷ অস্ট্রিয়ান বৈজ্ঞানিকদের সেই সতর্কবার্তা একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাওয়ায় ফ্রান্স এবং জার্মানি একযোগে রাশিয়াকেই দুষছে৷
তেজস্ক্রিয় বিকিরণের অভিশাপ যে কী, তা এর আগে বুঝেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চের্নোবিল৷ আশির দশকে সেখানকার পারমাণবিক চুল্লি থেকে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়তা কাবু করে ফেলেছিল গোটা এলাকা, ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিল জনজীবন৷ সাম্প্রতিক সময়ে, ২০১১ সালে জাপানে বিধ্বংসী সুনামির পর ফুকুশিমা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কথাও ভোলেননি বিশ্ববাসী৷ এসবের পর ইউরোপের আকাশে তেজস্ক্রিয় মেঘের আনাগোনা স্বভাবতই উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.