সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জল্পনা, ইঙ্গিত ছিলই। এবার তাতেই যেন সিলমোহর পড়ল। ক্রেমলিনের কড়া সমালোচক, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে (Alexei Navalny) যে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল, তা নিশ্চিত করে দিলেন বার্লিনের চিকিৎসকরা। তবে কোন ধরনের বিষ তাঁর শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা এখনও অজানা। পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। এখনও নাভালনির শারীরিক অবস্থা গুরুতর। যদিও চিকিৎসকরা আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁর জীবন সংশয় নেই।
গত ২০ তারিখ সাইবেরিয়ার টমস্ক থেকে বিমানে মস্কো ফিরছিলেন নাভালনি। মাঝ আকাশে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। উপায় না দেখে ওমস্ক শহরে বিমানের জরুরি অবতরণ করিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। নাভালনি ঘনিষ্ঠদের প্রাথমিক ধারণা, টমস্ক বিমানবন্দরে তাঁর চায়ে বিষ মেশানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, নাভালনির স্নায়ুতন্ত্র ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। কোমায় আচ্ছন্ন হন তিনি। সেটা বিষের প্রভাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল।
এরপর নাভালনির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকায় জার্মানির বার্লিনে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিষ প্রয়োগের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন। ঠিক কোন রাসায়নিক তাঁর চায়ে মেশানো হয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে চিকিৎসকদের ধারণা, কোলিনেস্টেরাস (Cholinesterase) নামে এক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। কারণ, এই বিশেষ ধরনের এনজাইম সরাসরি মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্ট ও টক্সিকোলজি বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেস্টার হে’র কথায়, “এর প্রভাবে প্রথমে শ্বাসকষ্ট এবং তারপর পেশির সংকোচন-প্রসারণ বন্ধ হয়ে গোটা শরীর শক্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কেউ। ততক্ষণে তা স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।” ঠিক যেমনটা হয়েছিল নাভালনির ক্ষেত্রে।
যদিও পুতিন বিরোধী এই নেতার উপর বিষপ্রয়োগের চেষ্টা এবারই প্রথম নয়, আগেও হয়েছে। ২০১১ সালে ‘Anti-Corruption Foundation’ নামের একটি দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন নাভালনি। রুশ প্রশাসনে ভয়ানক দুর্নীতি তথা প্রেসিডেন্ট পুতিনের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে তাঁর সংস্থা। বিরোধীদের অভিযোগ, স্বাভাবিকভাবেই শাসনতন্ত্রের নিশানায় রয়েছেন নাভালনি। গত বছর জুলাইয়ে পুলিশি হেফাজতে থাকার সময় ভয়ংকর অ্যালার্জি হয়েছিল তাঁর। নাভালনির সন্দেহ ছিল, বিষক্রিয়াতেই এসব হয়েছিল। তবে এবারের অসুস্থতার কারণ যে একমাত্র বিষ, বার্লিনের চিকিৎসকরা তা নিশ্চিত করায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.