সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউক্রেনে (Ukraine) লক্ষ্যপূরণে রাশিয়া (Russia) বদ্ধপরিকর এবং এই ব্যাপারে রাশিয়া সফল হবেই। ইউক্রেনে যুদ্ধের (Russia-Ukraine War) অষ্টম দিনে এমনই জোরদার দাবি করলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। তিনি এমন কথা বলে দেওয়ার পর রুশ-ইউক্রেন শান্তি বৈঠক আদৌ কতখানি কাজে আসবে সে সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে বিভিন্ন শান্তিকামী দেশ।
এদিনই পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ তাঁর সঙ্গে পুতিনের যে আলোচনা হয়েছে তার ভিত্তিতে ফরাসি মিডিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ হতে চলেছে ইউক্রেনে। এবং এই যুদ্ধের ভয়াবহতা আরও অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে আগামী দিনে। ন্যাটোর জোটবদ্ধ দেশগুলি ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার বিষয়টিও মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না পুতিন।
সুতরাং ন্যাটোর দেশগুলির সঙ্গে তাঁর আগামী দিনে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আর রুশ বিদেশমন্ত্রী তো ইতিমধ্যেই বলেছেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনার কথা। অতএব পশ্চিমি দুনিয়ার কপালে চিন্তার ভাঁজ ক্রমেই গভীর হচ্ছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধের উত্তাপ ক্রমশই বাড়ছে। খেরসন শহর দখল করেছে রাশিয়া। খারকভ পতনের মুখে। গত ২৪ ঘণ্টায় খারকিভের লড়াইয়ে রাশিয়ার গোলার আঘাতে ইউক্রেনের ৩৪ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। রুশ গোলা থেকে বাঁচতে মাটির তলায় সাবওয়েই এখন আশ্রয় ইউক্রেনবাসীর এমনটাই দাবি করেছে ইউক্রেন প্রশাসন। যুদ্ধের জেরে মারিউপোল শহরে জল আর বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এই অভিযোগ করছেন দানেৎস্ক-এর গভর্নর।
এর মধ্যেই ইউক্রেনে রুশ হানায় গণহত্যা এবং মানবতার হত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের আইনজীবী তদন্ত শুরু করেছেন। করিম খান নামে ওই আইনজীবীর দাবি, তাঁর কাছে এই আদালতের একডজনেরও বেশি সদস্য রাশিয়ার হামলার ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। তার প্রেক্ষিতেই তিনি বিচারপতিকে জানিয়ে প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন।
গত তিন দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার হামলার সংখ্যাও বেড়েছে। ইউক্রেনের খারকিভ, চেরনিহিভ এবং মারিউপোল এখনও ইউক্রেনের হাতেই আছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এমনটাই দাবি করেছে ব্রিটেন। যুদ্ধে রাশিয়ারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এতদিন একথা স্বীকার করেনি মস্কো। কিন্তু গত সপ্তাহে তারা জানিয়েছে, হামলা চালাতে গিয়ে প্রায় ৫০০ রুশ সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১,৬০০ রুশ সেনা।
যদিও ইউক্রেনের দাবি, প্রায় সাত হাজার রুশ সেনা গত বৃহস্পতিবার থেকে এখনও পর্যন্ত এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু, ইউক্রেনের কতটা ক্ষতি এই যুদ্ধে হয়েছে? মানে, কতজন ইউক্রেন সেনার প্রাণ গিয়েছে? তা নিয়ে মুখ না-খুললেও ইউক্রেনের দাবি, তাদের অন্তত ২ হাজার সাধারণ নাগরিক রাশিয়ার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে ইউক্রেন থেকে যে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় রাশিয়া, তা সকলেই জানেন। বদলে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় নিজেদের হাতে। এজন্য পুতুল এক প্রশাসককে ইউক্রেনের ক্ষমতায় বসানোই মস্কোর লক্ষ্য। সেজন্য মস্কোর পছন্দ ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। ইউক্রেনের বর্তমান সরকারের আগে কিয়েভের ক্ষমতায় ছিলেন ইয়ানুকোভিচ। তিনি ছিলেন রুশপন্থী।
পাশাপাশি, পুতিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবেও ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে চিনত বিশ্ব রাজনীতি। কিন্তু, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে দু’বার ক্ষমতাচ্যুত হন ইয়ানুকোভিচ। কিয়েভের এক অনলাইন সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাশিয়া নাকি ইতিমধ্যেই ভিক্টরকে ইউক্রেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর প্রস্তুতি সেরে রেখেছে।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেন থেকে ফেরা ভারতীয় পড়ুয়াদের সঙ্গে বারাণসীতে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মন দিয়ে তাদের মুখে শোনেন ইউক্রেনের ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা। এদিকে, রোমানিয়াতে পা রাখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দেশের কেন্দ্রীয় অসামরিক পরিবহণমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়ে দিয়েছেন কোন প্রক্রিয়ায় ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনা হবে দেশে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, ১৯টি বিমান ৩৭২৬ ভারতীয় পড়ুয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজে নামছে। এই বিমানগুলির মধ্যে বায়ুসেনার বিমান ও অসামরিক বিমানও থাকছে।
এদিন বায়ুসেনার দু’টি বিমান এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করল ভারত। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা এবং পড়ুয়াদের ইউক্রেন থেকে ভারতে ফেরানো নিয়ে পরামর্শদাতা কমিটিকে বিবরণ দেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। ২১ সদস্যের এই কমিটির বৈঠকে নেতৃত্ব দেন জয়শংকর নিজেই। ছ’টি দলের ৯ সাংসদ বৈঠকে অংশ নেন। তার মধ্যে বিরোধীরাও ছিলেন। বৈঠকে বিরোধীরাও ইউক্রেনের পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাকে সমর্থন করেন।
রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে পড়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন, যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। আর এই পরিসংখ্যান মাত্র সাতদিনের। ২০২০ সালের শেষে ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৪০ লক্ষ। রাষ্ট্রসংঘের ভবিষ্যৎবাণী এইরকম অবস্থা চলতে থাকলে ৪০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ ইউক্রেন ছাড়তে পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.