সন্দীপ্তা ভঞ্জ: মন্দিরে-মন্দিরে ঈশ্বর সেবার অধিকার কি শুধু পুরুষদের? পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে সেই উত্তর বহু আগেই দিয়েছেন নন্দিনী ভৌমিক, রোহিণী ধর্মপালরা। পৌরহিত্যে লিঙ্গবৈষম্যের আঁধার ঘুচিয়ে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ওয়াশিংটনের সিয়াটেলের ঐক্যতান ক্লাব নারীশক্তির পুজোয় মেতে ওঠে। উমা এখানে পূজিত হন নারীদের হাতে। প্রিয়াঙ্কা গঙ্গোপাধ্যায় এবং অন্বেষা চক্রবর্তীরাই এখানে পৌরহিত্য করেন। সিয়াটেলে শারদোৎসবের(Probashe Durga Puja 2024) আয়োজন কেমন চলছে? খোঁজ নিল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
শারদ মরশুমের ঘন কাশবন সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেই বটে, তবে আগমনী সুরে মাতোয়ারা হয় ‘ঐক্যতান’ও।
পুজোর তিলোত্তমা থেকে দূরে থেকেও যেন উমার টানেই অনেকটা শিকড়ের কাছাকাছি ওয়াশিংটনের সিয়াটেল। কলকাতার মতো সেখানেও শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। ‘ঐক্যতান’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রিয়াঙ্কা গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, “আমাদের পুজো এবার চার বছরে পা দিল। তবে নবীন পুজো কমিটি হলেও আয়োজনের আড়ম্বর কোনও অংশে কম নয়।” পাত পেড়ে অষ্টমীর খিচুড়ি ভোগ খাওয়া থেকে নবমীতে কবজি মাটন খাওয়া, আড্ডা দেওয়া, নাচেগানে জমে ওঠে সিয়াটেলের এই ক্লাবের পুজো। বছর তিনেক আগে একেবারে ঘরোয়াভাবেই বাড়ির পুজো হিসেবে শুরু হয়েছিল ঐক্যতানের উমা আরাধনা। আজ সেখান থেকেই সিয়াটেলের বাঙালিদের একসূত্রে বেঁধে গুটি-গুটি পায়ে ঐক্যতানের পুজোর কলেবর বেড়েছে। এবার সেখানে দুর্গাপুজো উদযাপন হবে ১২ (শনিবার) এবং ১৩ অক্টোবর (রবিবার)। শুক্রবার রাত থেকেই প্রস্তুতির তোড়জোড় আরও বাড়বে বলে জানালেন প্রিয়াঙ্কা। প্রথমত তিনি পুজোর পুরোভাগে উপরন্তু পৌরহিত্যের দায়িত্বও তাঁর কাঁধে, অতঃপর এই দুই দিন প্রায় দম ফেলার সময়ও পান না তিনি।
বিদেশ-বিভুঁইয়ে থেকে যাতে পুজোর আমেজ মিস না করেন বাঙালিরা, সেই জন্য ব্যবস্থাপনাও বেশ জমজমাট। হাজারের কাছাকাছি মানুষজন জড়ো হন ঐক্যতানের পুজোয়। প্রতিমাসজ্জা থেকে শুরু করে মন্ডপসজ্জা, হাতে হাতে সবটা নিজেরাই সারেন। উমা আগমনের মাসখানেক আগে থেকেই চলতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। দুর্গাপুজোর কনসার্ট এখানে বড় চমক। এবার ঐক্যতানের তরফে আমন্ত্রিত সাহানা বাজপেয়ী এবং সামন্তক সিনহা। আদ্যোপান্ত বাঙালিয়ানা বজায় থাকে এখানকার দুর্গাপুজোয়। ঘরের মেয়ে উমাকে প্রকৃতি মায়ের মতোই আরাধনা করা হয়। শারদোৎসব স্পেশাল মেনুতে কী কী রয়েছে? জম্পেশ বাঙালি মেনুর কথা বললেন পুরোহিত তথা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শনিবার থাকছে- আলাপে খিচুড়ি, লাবড়ার মহিমা, ঝুরঝুরে আলুভাজা, টমেটো খেজুরের চাটনি, পাঁপড় ভাজা, লালচে-কালচে মিষ্টি। আর রবিবার মিষ্টি পোলাও সহযোগে গোলবাড়ির কষা মাংস, কাশ্মিরী আলুরদমের মতো পদ। শেষপাতে আমের টক, চমচমে মিষ্টিমুখ।
ঐক্যতানের মহিলা সদস্যরাই এই দুর্গাপুজোর দায়িত্বে থাকেন। যেখানে নারীশক্তির আরাধনায় নারীরা, সেখানে নিয়মমাফিক সব রীতি-রেওয়াজ পালন হয়। প্রিয়াঙ্কা গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “কলকাতা থেকে দূরে থাকায় যেহেতু পুজো বা যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে পরিবার, স্বজনদের ভীষণ মিস করেন সকলে, তাই আমাদের এখানে পাড়ার আমেজটা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। আমরা শুধু দূর্গাপুজোর সংস্কৃতি মন্ত্র আওড়ানোয় বিশ্বাসী নই। বরং মন্ত্রগুলোর সহজ অর্থ করে বলি। অনেকটা গল্পের মতো করে সাজিয়ে বলা আর কী! আমাদের পুজোর একটা বিশেষ রীতি রয়েছে। সেটা হল- সন্ধিপুজোর সময়ে ১০৮ টি প্রদীপ জ্বেলে ১০৮ জন নারী একত্রিত হয়ে আরতি করেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.