সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের আগেই ভারত-মার্কিন বন্ধুত্বের তাল কাটল তাঁরই কথাতে। ভারত সম্বন্ধে কড়া ভাষায় নেতিবাচক কথা বললেন ট্রাম্প। সাফ জানালেন, মোদি খুব ভাল মানুষ। তাঁর ভীষণ পছন্দের মানুষ। কিন্তু আমেরিকা সম্বন্ধে ভারতের মনোভাব ভাল নয়। আমেরিকার প্রতি ভারতের ‘বাণিজ্যিক ব্যবহার’ ভাল নয়। মোদি ভাল বলেই তিনি ভারতে আসছেন। তাছাড়া ভারত হল বাণিজ্য শুল্কের রাজা। অতিরিক্ত কর চাপিয়ে আমেরিকার পণ্য বিক্রিতে ক্ষতি করেছে ভারত।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বরাবরই স্পষ্টবাদী, খামখেয়ালি, আপাদমস্তক ব্যবসায়ী মনোভাবের মানুষ বলেই জানে দুনিয়া। আমেরিকার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু দেশগুলির বিরুদ্ধেও তিনি এর আগে মুখের উপর সত্যি কথা বলে দিয়ে তাদের বিরাগভাজন হয়েছেন। অতীতে তাঁর কড়া কথা ভালভাবে নেয়নি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপিন্স, ইজরায়েল, তাইওয়ান, কানাডা, ব্রিটেনের মতো বন্ধু দেশগুলি। মার্কিন কূটনীতিক ও সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, বন্ধু দেশগুলির বিরুদ্ধে ট্রাম্প ভেবেচিন্তেই নেতিবাচক কথা বলে থাকেন। এটা তাঁর কৌশল। এভাবেই ভোকাল টনিক দিয়ে তিনি একটা মানসিক চাপ তৈরি করেন যাতে তাঁর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় বা কাজের কাজটি হয়। ভারত সফরে এসে তিনি ভারতের সঙ্গে এমন একটা বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছেন যাতে আমেরিকার লাভ হয় বেশি।
আমেরিকার তৈরি হার্লে ডেভিডসন বাইক, নানা কোম্পানির মোটর গাড়ি, উন্নত প্রযুক্তি, সরঞ্জাম, কৃষিজাত পণ্য, চিকিৎসা যন্ত্রাংশ, ডিজিটাল পণ্য-সহ সবরকম পণ্যের উপর থেকে ভারত যাতে শুল্ক কমিয়ে নেয় বা তুলে নেয়। এটাই ট্রাম্পের আসল উদ্দেশ্য। আপাদমস্তক তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তাই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই তিনি ভারতের নিন্দে করে ভারত সরকারের উপর চাপ তৈরি করেছেন। এজন্য তিনি বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মানুষটি ভাল। কিন্তু সরকারের বাণিজ্য নীতি ও মনোভাব মোটেও ভাল নয়।
ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ বলে আগেও সম্বোধন করেছেন ট্রাম্প। আগামী ২৪ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে দু’দিনের ভারত সফরে আসছেন। তাঁর উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে সামরিক, বাণিজ্যিক একাধিক চুক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু নানা বিষয়ে মতানৈক্য ধরা পড়েছে দু’দেশের মধ্যে। যেমন, দিল্লি চায় ভারতীয় ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করুক ওয়াশিংটন। বিনা শুল্কে মার্কিন বাজারে নির্দিষ্ট কিছু ভারতীয় পণ্যকে ঢুকতে দেওয়া হোক। আমেরিকা এটা করতে না দিলে ভারতও মার্কিন পণ্যের উপর থেকে শুল্ক কমাবে না।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া ও বাণিজ্যিক শত্রু চিনকে রুখতে ভারতকে পাশে পাওয়া জরুরি। ভারত হল আমেরিকার সামরিক ও আর্থিক জোটসঙ্গী। কিন্তু ভারসাম্যের খেলায় ভারতকে সেভাবে আমেরিকা পাশে পাচ্ছে না। আমেরিকার কথা ও নির্দেশ একতরফা শুনতে চায় না ভারত সরকার। এতে ক্ষোভ রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। কারণ সংঘ পরিবার, গেরুয়া শিবির, কংগ্রেস, বাম দলগুলি ও বিরোধীদের দাবি, আমেরিকার কথা শুনে সরকার যেন কিছুতেই বাণিজ্যনীতি তৈরি না করে। বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের পাল্লা যেন ভারী হয়। তাই ট্রাম্পের সুরে সুর মেলাতে পারছেন না মোদিও।
মঙ্গলবার প্রিন্স জর্জ কাউন্টি-তে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘বাণিজ্যিক দিক দিয়ে ভারত আমাদের সঙ্গে মোটেও ভাল ব্যবহার করে না। এজন্য ভারতের সঙ্গে দ্রুত বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তি হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। সূত্রের খবর, ট্রাম্পের সফরের ঠিক আগে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইথিজারের ভারতে আসার কথা ছিল বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে চুক্তির শর্ত, বাক্যবন্ধ, বোঝাপড়া নিয়ে বেঁকে বসেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। দু’জনের মধ্যে ফোনে দীর্ঘ কথা হয়েছে। কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র বেরয়নি। ফলে ট্রাম্পের আসন্ন সফরে বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে না বলেই জানা গিয়েছে। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হবে। তবে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে হওয়ার সম্ভাবনা কম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.