ফাইল ফটো
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের স্বপ্নভঙ্গ হল পাকিস্তানের। আক্ষরিক অর্থেই হতাশায় ডুবে গেলেন ইমরান খান। কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা এড়িয়ে গেলেন ট্রাম্প। উলটে স্বীকৃতি দিলেন পাকিস্তানের মাটিতে তৈরি হওয়া সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মকে। ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি প্রোটোকল মেনে ফের নিউইয়র্কে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন ট্রাম্প ও মোদি। আর এই বৈঠক থেকে ভারতের প্রাপ্তি অনেক।
প্রত্যাশিতভাবেই যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে কথা প্রসঙ্গে মোদিকে পাশে বসিয়ে ট্রাম্প সাফ জানান, পাকিস্তানের মাটি থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাস সহজেই রুখতে সক্ষম মোদি। কাশ্মীর সমস্যার সমাধানও তিনিই করতে পারবেন। মোদির চেয়ে ভালভাবে আর কে’ই বা পারবেন? ট্রাম্পের এই কথার অর্থ, তিনি নিজে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা তো করছেনই না। বরং মোদি কাশ্মীর নিয়ে যা পদক্ষেপ করবেন তাতেই তাঁর সায়ও আছে। অর্থাৎ ইমরানরা যা চেয়েছিলেন হল তার উলটো। তবে ইমরানের সঙ্গে সোমবার যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, কাশ্মীরে তিনি মধ্যস্থতা তখনই করবেন যদি দু’পক্ষ (ভারত ও পাকিস্তান) একসঙ্গে রাজি হয়, তবেই। ফলে ট্রাম্পকে কাশ্মীরে মাথা গলাতে দেওয়া নিয়ে ইমরানের ছক ভেস্তে গেল।
এদিন মোদিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি মোদির মেজাজ, মোদির বক্তব্যে, মোদির ব্যক্তিত্বে প্রচণ্ড মুগ্ধ। রাষ্ট্রনেতা হওয়া উচিত এরকমই। মোদি হলেন ভারতের রকস্টার। মোদি হলেন কিংবদন্তি মার্কিন রকস্টার এলভিস প্রেসলির মতোই। হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামের ৫০ হাজার দর্শক মোদিকে দেখে পাগল হয়ে উঠেছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন এলভিস প্রেসলি স্টেডিয়ামে উঠেছেন। আসলে উনি একজন ভদ্রলোক ও মহান নেতা। আমি বেশ মনে করতে পারি আগে ভারতের অবস্থা ছিল খুবই রুগ্ন, দীর্ণ। খুবই অসন্তোষ ও দ্বন্দ্ব ছিল সেখানে। কিন্তু, মোদি সবাইকে একসঙ্গে করে চলছেন। কারও প্রতি বৈষম্য করেননি মোদি। সবার মন রাখার চেষ্টা করছেন। বাবা যেমন পরিবারের সবাইকে আগলে রেখে একসঙ্গে নিয়ে চলে, মোদিও তাই করছেন ভারতবাসীর জন্য। উনিই ফাদার অব ইন্ডিয়া। আমরা তো ওঁকে ফাদার অব ইন্ডিয়াই বলি। উনি ভারতের পিতা।’
মঙ্গলবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদি ভক্তরা কয়েক হাজারবার রিটুইট করেছেন ট্রাম্পের এই প্রশংসা ও টুইটকে। জবাবে মোদি বলেন, ‘মিস্টার ট্রাম্পকে আমি ভারতের সত্যিকারের বন্ধু বলে মনে করি। তাঁর পরামর্শ আমাদের কাছে মূল্যবান।’ এদিন মোদি-ট্রাম্প বৈঠকেই সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও প্রাথমিক কথা হয়েছে। সূত্রের খবর, চলতি সফরেই ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করতে চলেছে দুই দেশ। চিনের সঙ্গে চলতি বাণিজ্য যুদ্ধে ভারতকে পুরোপুরি নিজেদের পাশে পেতে ভারতের স্বার্থ পূরণের জন্যই এই ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি করতে প্রস্তাব দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেজন্য ‘জেনারালাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স’ (জিএসপি) নামক আমেরিকার বাণিজ্য বিধির মধ্যে ভারতের অবস্থান ‘সুবিধাপ্রাপ্ত উন্নয়নশীল দেশ’ হিসেবে বহাল রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে। রফতানি বাণিজ্য নিয়ে সংঘাতের জেরে ভারতের এই সুবিধা জুন মাসে ছিনিয়ে নিয়েছিল আমেরিকা। ফলে এটি নয়াদিল্লির পক্ষে সুখবর। এর জেরে ভারতের বহু পণ্য শুল্ক ছাড়াই আমেরিকার বাজারে বিক্রির জন্য ঢুকতে পারবে।
বৈঠকের আগেই চিনের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে ট্রাম্পের কাছে নিজেকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলেন মোদি। তেমনি চিনের নাম নিয়ে চিনকে তুলোধোনা করে মোদিরও মন জয় করেন ট্রাম্প। মোদি বলেন, ‘পাকিস্তানকে যারা (চিন) উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে তাদের ভেবেচিন্তে তা করা উচিত। কারণ এই অর্থই সরাসরি পাক সন্ত্রাসবাদীদের হাতে যাচ্ছে। সব দেশের উচিত রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞা তালিকা এবং এফএটিএফের (ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স) মতো সন্ত্রাস দমনের প্রক্রিয়াগুলো থেকে পক্ষপাতিত্বকে দূরে সরিয়ে রাখা। উল্লেখ্য, পাকিস্তানকে এফএটিএফের শাস্তি থেকে আড়াল করতে, বাঁচাতে এখনও চেষ্টা করে চলেছে চিন।’ সাধারণ সভার মূল মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়েও বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে চিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যে বৈষম্য ও ঘাটতি, সমুদ্রপথে দাদাগিরি, একাধিপত্য সব কিছুর জন্যই চিন দায়ী। চিনের মান্ধাতা আমলের মানসিকতার জন্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবার ক্ষতি হচ্ছে। তাই চিনের সঙ্গে আপস করার দায় আমেরিকার একার নয়।’ এভাবেই চিনকে একহাত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গলবার রাষ্ট্রসংঘে জাতীয়তাবাদের সুর বাঁধেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি।
আর সব শেষে মোক্ষম কথাটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়নের ধারণা সাময়িক এবং এতে আখেরে সমাজ ও দেশের কোনও উপকারই হয়নি। তাই জাতীয়তাবাদই শেষ কথা। ভবিষ্যত পৃথিবীতে শেষ কথা বলবেন দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদীরাই। বিশ্বায়নের কোনও জায়গা নেই আগামী দিনে। আর্থিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী স্বাধীন জাতিগুলিই আগামী দিনে পৃথিবীতে রাজত্ব করবে। পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরান নিজেদের মানসিকতা, ঔদ্ধত্য না বদলালে ওদের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। অবরোধ আরও কঠোর করা হবে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.