সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ‘বিদ্রোহী’ ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে দানা বেঁধেছে নানা রহস্য। তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। ষড়যন্ত্রের আঙুল উঠেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে। এবার নানা গুঞ্জনের মাঝেই প্রকাশ্যে এল ওয়াগনার প্রধানের একটি পুরনো ভিডিও। যেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “ভেঙে পড়তে পারে বিমান।” তাহলে কি আগেই ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করেছিলেন প্রিগোজিন?
রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায় বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী এক বেসরকারি সংস্থার এমব্রেয়ার লিগ্যাসি বিমান তেভর এলাকার কুজেনকিনো গ্রামের কাছে ভেঙে পড়ে। ওই বিমানে পাইলট, ক্রু, যাত্রী-সহ মোট ১০ জন ছিলেন। মৃতদের তালিকায় প্রিগোজিনও (Yevgeny Prigozhin) রয়েছেন বলেই গুঞ্জন ছিল। দুর্ঘটনার চারদিন পরে রবিবার রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটি সূত্রে সরকারিভাবে প্রিগোজিনের মৃত্যু সংবাদ মেলে। কমিটির মুখপাত্র শ্বেতলানা পেত্রেঙ্কো জানান, “তেভর এলাকায় ভেঙে পড়া বিমান থেকে দশজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সেগুলির মলিকিউলার-জেনেটিক পরীক্ষা করিয়ে মৃতদের পরিচয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা গিয়েছে। বিমানে যতজন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন, তাঁদের সকলেরই মৃতদেহ মিলেছে।” যদিও প্রিগোজিনের নাম উল্লেখ করেননি তদন্তকারী কমিটির মুখপাত্র। তবে ওই বিমানে যাত্রী তালিকায় ছিল প্রিগোজিন-সহ ওয়াগনার নেতাদের নাম। তাঁদের সকলের মৃত্যুর জল্পনায় সিলমোহর দিয়েছে রুশ প্রশাসন।
এরপরেই প্রকাশ্যে এসেছে ওয়াগনার প্রধানের একটি পুরনো ভিডিও। ৪০ সেকেন্ডের ক্লিপটিতে প্রিগোজিন যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়ার গতির সঙ্গে বিমানের প্রসঙ্গ টেনেছেন। যেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাশিয়া। আজ যদি এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা না হয় তাহলে মাঝ আকাশে ভেঙে পড়বে বিমানটি। আমি সততার সঙ্গে বলছি। রাশিয়ার মানুষদের মিথ্যা বলা হচ্ছে। আমার বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। এর থেকে আমাকে মেরে ফেলা শ্রেয়।”
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে রুশ সামরিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন প্রিগোজিন। পরে অবশ্য জানা যায়, লড়াই থামিয়ে বেলারুশে ঘাঁটি গেড়েছেন ওয়াগনার প্রধান। শোনা গিয়েছিল, পুতিনের সঙ্গে নাকি বোঝাপড়াও হয়ে গিয়েছে তাঁর। কিন্তু ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণার ঠিক দু’মাস পরেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই অনেকে দাবি করেন নিজের পথের কাঁটা সরিয়ে ফেলেছেন পুতিন। রুশ সরকার ও প্রশাসনের মদতেই এই বিমান দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। যদিও এই দাবি নস্যাৎ করেছে ক্রেমলিন।
তবে বিশ্লেষকদের একাংশ এখনও মনে করছেন, প্রিগোজিন বেঁচে রয়েছেন। অন্য কোথাও গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। কোনও একদিন আবার কোনও গোপন ডেরা থেকে বার্তা দিয়ে সকলকে চমকে দেবেন ‘বিদ্রোহী’ওয়াগনার প্রধান। কিন্তু নানা জল্পনা-কল্পনার মাঝে এককালের ‘রাঁধুনি’কে নিয়ে নিরাবতা ভেঙে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। প্রিগোজিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.