ফাইল ফটো
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের দাবি ও যোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ জানাল পাকিস্তান। ভারতের দাবির তীব্র বিরোধিতাও করেছে তারা। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবিত পুনর্গঠন ও সংস্কার নিয়ে অনেক বছর ধরেই আলোচনা চলছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, বিভিন্ন শর্ত পূরণ করায় নানা যোগ্যতা ও শক্তির বিচারে নয়া চার শক্তি রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পেতে পারে। এরা হল ভারত, ব্রাজিল, জার্মানি, জাপান। এই চার দেশকে বলা হচ্ছে চতুঃশক্তি বা ‘গ্রুপ ফোর’। কারণ এই সংস্কার ও এদের অন্তর্ভুক্তি না হলে নিরাপত্তা পরিষদ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে। কিন্তু ভারতের ও বাকি তিনটি দেশের স্থায়ী সদস্যপদের বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান।
রাষ্ট্রসংঘে পাক প্রতিনিধি মুনির আকরম মঙ্গলবার রাতে তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘বিভিন্ন কারণে এই চার দেশের স্থায়ী সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নেই। এই চার দেশ য়ে সক্রিয়তা দেখাচ্ছে তা রাজনৈতিকভাবে ফায়দা তোলার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ তার বাজার অর্থনীতি ও বিপুল জনসংখ্যাকে হাতিয়ার করে কাশ্মীরে ভয়ঙ্করভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। আমাদের প্রতিবেশীরা বেপরোয়া। তারা আন্তর্জাতিক আইন মানে না। এরপর তারা রাষ্ট্রসংঘে স্থায়ী সদস্যপদ পেলে তা খারাপ কাজেই ব্যবহার করবে।’ পাকিস্তানের এই দাবি নিয়ে চুপ ছিলেন চিনা প্রতিনিধি। তিনি হ্যাঁ, না কিছুই বলেননি। ব্রাজিল, জার্মানি, জাপান জানিয়েছে, পাকিস্তান বা চিন কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না। নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার হবেই। সেটা ঠিক সময়েই হবে।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রসংঘের সামনে নিজেদের দেশের জঙ্গি কার্যকলাপ ধামাচাপা দিতে এক নয়া ফন্দি বের করেছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানে বসবাসকারী বেশ কিছু ভারতীয় দূতাবাস কর্মীকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতকে দায়ী করতে চেয়েছিল তারা। রাষ্ট্রসংঘে এই বিষয়ে মঙ্গলবার আবেদনও জানায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের এই অদ্ভুত দাবিকে সমর্থন জানায় চিন। কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স-সহ বাকি দেশগুলি সরাসরি ভারতকে সমর্থন করায় ভেস্তে যায় পাক ষড়যন্ত্র। এই ঘটনায় বাকি সদস্য দেশগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ভারত।
বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, পাকিস্তান অভিযোগ করে, আফগানিস্তানে বেশ কিছু ভারতীয় পাকিস্তানের মাটিতে নাশকতার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের নাম হল রাঘবচারী পার্থসারথি, বি সুধাকর পেদিরেদলা, বেণুমাধব ডোংরা, অজয় মিস্ত্রি, আপ্পাজি আঙ্গারা ও গোবিন্দ পট্টনায়েক দুগিভালসা। পার্থসারথি ও সুধাকর আফগানিস্তানের মাজার-এ-শরিফ এলাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। বাকিরাও কাজের সূত্রেই আফগানিস্তানে ছি লেন। পাকিস্তানের এই অভিযোগের পরে সুধাকর বাদ দিয়ে বাকি পাঁচজনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ভারতে। সুধাকরের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সন্দেহ করা হচ্ছে তাঁকে ভারতীয় গুপ্তচর সন্দেহে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে পাক গুপ্তচরসংস্থা আইএসআইয়ের এজেন্টরা।
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান অভিযোগ করে, এই ছ’জন আফগানিস্তানে বসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত। তাই এদেরও গ্লোবাল টেররিস্ট বা বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা হোক। নিরাপত্তা পরিষদের সামনে পাকিস্তানের চোখে অভিযুক্ত পাঁচ ব্যক্তিকে হাজির করে ভারত। তাঁরা তাঁদের বক্তব্য রাখেন। পাকিস্তানের প্রস্তাবে সম্মতি জানায় চিন। কিন্তু বাকিরা ভারতের দাবিকে সমর্থন জানায়। ফলে জয় হয় ভারতের।
এই ঘটনার পর ভারতের তরফে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ করা হয়, নিজেদের মুখ বাঁচাতে এই ষড়যন্ত্র করেছে পাকিস্তান। ইতিমধ্যেই মাসুদ আজহার, দাউদ ইব্রাহিমের মতো জঙ্গি নেতাদের গ্লোবাল টেররিস্ট বা বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রসংঘ। পাকিস্তানকে বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও নিজেদের দেশে জঙ্গি কাজকর্ম দমন করেনি। নিজেদের দেশের নাম রক্ষার জন্য দুটি কৌশল নিয়েছে ইসলামাবাদ। এক, পাকিস্তানে থাকা জঙ্গিদের বেশিরভাগকেই এনকাউন্টার বা পাক সেনার হাতে মৃত দেখানো হচ্ছে। দুই, রাষ্ট্রসংঘের কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করা যে ভারতও জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত।
সূত্রের খবর, আফগানিস্তানে থাকা ভারতীয়দের মধ্যে যাঁদের ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট বলে সন্দেহ করেছিল আইএসআই, তাঁদের নামই জঙ্গি হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল রাষ্ট্রসংঘে।
[আরও পড়ুন: কাশ্মীরে হিন্দুদের ফেরাতে ইজরায়েলী মডেল, ইঙ্গিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.