সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দাউদ সঙ্গীর প্রত্যর্পণ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান সরকার। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর নির্দেশে সেজন্য জোরালো লবি করতে মাঠে নেমে পড়েছেন পাকিস্তান বিদেশমন্ত্রকের অফিসার ও কূটনীতিকরা। কারণ, দাউদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জাবির মোতিওয়ালার প্রত্যর্পণ ঠেকাতে না পারলে জাবিরকে যদি আমেরিকা হাতে পায় তাহলে অনেক গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। আইএসআইয়ের মদতেই দাউদের এত বাড়বাড়ন্ত। পাকিস্তানের মদতেই দাউদ বিশ্বজুড়ে মাদক পাচার করে ও দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে সন্ত্রাস চালায়। এই ‘ওপেন সিক্রেট’ যাতে প্রমাণিত না হয় এবং সংবাদমাধ্যমের সামনে না আসে সেজন্য মোতিওয়ালার প্রত্যর্পণ রুখে দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে পাক লবি।
[আরও পড়ুন: অনুমতি দিল না আদালত, থমকে গেল মালিয়াকে ভারতে ফেরানোর প্রক্রিয়া]
ভারতীয় কূটনৈতিক মহল সূত্রে খবর, এ ব্যাপারে সবরকম শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসলামাবাদ। ৫১ বছরের জাবির তাঁদের দেশের অভিজাত ও ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলে এতদিন পরিচয় দিতেন পাক কূটনীতিকরা। কিন্তু গত বছর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এর তথ্যের ভিত্তিতে জাবিরকে লন্ডনে গ্রেপ্তার করেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দারা। অভিযোগ, দাউদের হয়ে আন্তর্জাতিক হাওয়ালা ও মাদক চক্র চালায় জাবির। তাকে গ্রেপ্তারের পর এখন জাবিরকে ব্রিটেন থেকে আমেরিকায় প্রত্যর্পণের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ওয়াশিংটন। ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এজন্য প্রত্যর্পণের মামলা দায়ের করেছে এফবিআই।
আসলে দাউদকে অনেক আগেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন। ইসলামাবাদের আশঙ্কা জাবির মোতিওয়ালাকে আমেরিকা গ্রেপ্তার করে তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারলে, তাকে জেরা করে সব তথ্য বের করে নেবে। যেহেতু জাবির দাউদের অন্যতম লেফটেন্যান্ট, তাই করাচি ও পাকিস্তানে ডি-কোম্পানির সব কাজকর্ম এবং ভিতরের খবর সে জানে। দাউদের সঙ্গে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগ, পাক প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে দাউদের দহরম মহরম সবই জাবিরের জানা। এই অবস্থায় ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রত্যর্পণ মামলায় জাবিরের আইনজীবীকে কূটনৈতিক ভাবে সবরকম সাহায্য করতে নেমেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানি কূটনীতিকরা বলছেন, জাবির মোতিওয়ালা মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত। বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও নাকি করেছে। তার বিরুদ্ধে হাওয়ালা, মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে প্রত্যর্পণ করা ঠিক হবে না। এর আগে একবার প্রত্যর্পণে বাগড়া দিয়েছে পাকিস্তান। আদালতে তারা জানিয়েছে, জাবির মোতিওয়ালা তাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন। জাবিরকে অকারণে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। তবে আদালতে এফবিআই-এর তরফে ব্যারিস্টার জন হার্ডি জানিয়েছেন, মোতিওয়ালা নিয়মিত বিভিন্ন দেশে সফরে যায়। দাউদের হয়ে সে সব দেশে লেনদেন করে সে। ফলে শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজনীন সন্ত্রাস ও মাদক চক্র বন্ধ করার স্বার্থেই মোতিওয়ালাকে প্রত্যর্পণ করা জরুরি। মোতিওয়ালার বিরুদ্ধে নারকো-টেররিজম বা মাদক-সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ এনেছে এফবিআই। ভারত মনে করছে, এই অবস্থায় জাবিরের প্রত্যর্পণ নিশ্চিত হলে লাভবান হবে তারা। জাবিরকে জেরা করে পাওয়া এফবিআইয়ের সব তথ্যই নয়াদিল্লির হাতে আসবে। সন্ত্রাসে পাক সরকারের মদত আরও প্রকাশ্যে আসবে।
এদিকে, দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ রিয়াজ ভাটিকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করল মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের অ্যান্টি এক্সটরশন সেল (এইসি)। সূত্রের খবর, জোহনেসবার্গের বিমান ধরার সময় রিয়াজকে বিমানবন্দর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ডি-কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে জোহনেসবার্গে যাচ্ছিল রিয়াজ। সেখানে দাউদের অন্য লোকজনেরও জড়ো হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই রিয়াজ ধরা পড়ে যায়। এর আগে ২০১৫ সালেও একবার গ্রেফতার হয়েছিল রিয়াজ। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকিংয়ের সময় ধরা পড়ে দাউদের এই সহযোগী। তার কাছে দু’টি পাসপোর্ট পেয়েছিলেন ইমিগ্রেশন কর্তারা।
[আরও পড়ুন: তিন দশকের সর্ববৃহৎ তিমি জালে, আনন্দে মাতোয়ারা জাপানের কুশিরো]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.