সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘মিশন শক্তি’ তথা ভারতের ঐতিহাসিক সাফল্য নিয়ে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাল ভারতের দুই প্রতিবেশী। যথারীতি পাকিস্তান তীব্র আশঙ্কা ও যুদ্ধভীতি প্রকাশ করেছে। ভারতের নাম না করে পাক বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, “মহাকাশ হল মানব সভ্যতার সাধারণ বিচরণক্ষেত্র। এটা হল সৃষ্টির সেই ঐতিহ্য যা জন্মসূত্রে সব মানুষ পেয়ে এসেছে। সব জাতি, ধর্ম, সব দেশের সেখানে সমান অধিকার। সেখানে যুদ্ধের দামামা বাজানো খুবই দুশ্চিন্তার। পাকিস্তান আশা করে দুনিয়ার সব দেশ মিলে মহাকাশের সুরক্ষা ও সমানাধিকার বজায় রাখবে। মহাকাশের সামরিকীকরণ হতে দেওয়া উচিত নয়।”
[আরও পড়ুন: মহাকাশে স্যাটেলাইট ধ্বংস করল ভারত, সফল উৎক্ষেপণ ‘এ স্যাট’ মিসাইলের]
পাক বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, মহাশূন্যে ভারতের আগ্রাসী মনোভাবে পাকিস্তান গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মহাকাশে সামরিকীকরণ ও মহাশূন্যে যুদ্ধের আতঙ্ক দূর করতে হবে শক্তিশালী সব দেশকেই। এজন্য অভিন্ন নীতি তৈরি করে সব দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে যাতে পৃথিবীর চারপাশে থাকা মহাশূন্য যেন সুরক্ষিত থাকে। এই প্রসঙ্গে স্প্যানিশ উপন্যাস ‘ডন কিহোতে’-র প্রসঙ্গ টেনে পাক বিদেশমন্ত্রক কটাক্ষ করে বলেছে, “আমাদের প্রতিবেশী দেশের গর্বিত আস্ফালন দেখে মনে পড়ে যাচ্ছে হাওয়া কলের বিরুদ্ধে ডন কিহোতে যেভাবে ব্যর্থ কীর্তি তৈরির চেষ্টা করেছিল।” সপ্তদশ শতকে মিগুয়েল দ্য সেরভান্তিসের লেখা এই জনপ্রিয় উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের প্রসঙ্গ তুলে ভারতের সামরিক সাফল্যকে কটাক্ষ করেছে ইসলামাবাদ।
তবে পাকিস্তানের সব সময়ের বন্ধু তথা ভারতের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী চিন কিন্তু সংযত প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। চিন এদিন বলেছে, “ভারত আজ ঠিক কী করেছে সেই রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। তবে চিন আশা করে মহাশূন্যকে নিরাপদ রাখতে এবং সেখানে শান্তি বজায় রাখতে বিশ্বের সব দেশ দায়িত্বশীল, ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ করবে।”
উল্লেখ্য, আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের আছে শত্রু দেশের কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট মহাকাশেই ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা। সেই ‘বিরল ক্ষমতার তালিকায়’ চতুর্থ দেশ হিসাবে যুক্ত হল ভারতের নাম। ষাটের দশকে আমেরিকা এই সাফল্য পেয়েছিল। আশির দশকে সফল হয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। ২০০৭ সালে সফল হয় চিন। চিনের ১২ বছর পরে সফল হল ভারত। ২০০৭ সালে চিন কক্ষপথে নিজেদের একটি ‘নিষ্ক্রিয় উপগ্রহ’কে ধ্বংস করতে পরীক্ষামূলকভাবে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছিল। সেই পরীক্ষা দুর্দান্তভাবে সফল হয়েছিল। তবে মহাকাশে পৃথিবীর চারপাশে সেই সময়ের জন্য কয়েক হাজার টনের ভয়াবহ ইলেকট্রনিক গারবেজ বা ইলেকট্রনিক আবর্জনা তৈরি হয়েছিল। এগুলি হল ধ্বংস হওয়া চিনা উপগ্রহের টুকরো। আদতে এগুলি ছিল অন্য দেশের কৃত্রিম উপগ্রহের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক।
[আরও পড়ুন: ককপিটে ফেরার অদম্য জেদ, ছুটি শেষের আগেই কাজে যোগ দিলেন অভিনন্দন বর্তমান]
পৃথিবীর চারপাশে কয়েক মাস ধরে ঘুরছিল এরকম কয়েক লক্ষ টুকরো। অন্য দেশের উপগ্রহ এবং মহাকাশ স্টেশনের কাছেও বিরাট বিপদ হয়েছিল দেখা দিয়েছিল চিনা উপগ্রহের এই টুকরোগুলি। এগুলির একেকটির ওজন ছিল কয়েক কেজি থেকে কয়েক টন। এগুলির সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটলে অনেক দেশের অনেক ভাসমান উপগ্রহ বা ভাসমান মহাকাশ স্টেশন ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মানুষ যখন থেকে মহাকাশে অভিযান শুরু করেছে তারপর থেকে মানব সভ্যতার তৈরি এত ‘বিপজ্জনক আবর্জনা’ মহাকাশে কখনও তৈরি হয়নি। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে নিজেদের তৈরি এই বিপজ্জনক আবর্জনা মহাকাশে তৈরি করেছিল চিনের লালফৌজ। তখন চিনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের তীব্র নিন্দা করেছিল আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ভারত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.