সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধের কালো মেঘে আকাশ অন্ধকার লেবাননের। ইরানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন হেজবোল্লাকে টার্গেট করে সেখানে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ছে বোমা। আঘাত হানা হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে। ইজরায়েলের মারে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে লেবাননের রাজধানী বেইরুট। ইতিমধ্যে গোটা দেশে মৃতের সংখ্যা দুহাজার পেরিয়ে গিয়েছে। ঘরছাড়া প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ।
গত জুলাই মাস থেকে সংঘাত তীব্র হয় ইজরায়েল ও হেজবোল্লার মধ্যে। ইজরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির এক ফুটবল স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়ে জঙ্গি সংগঠনটির রকেট। হামলায় মৃত্যু হয় ১২ জনের। এই ঘটনাতেই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে। ক্রমাগত হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে লেবাননে আক্রমণের ধার বাড়ায় ইজরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর ইজরায়েলি সেনার অভিযানে নিকেশ হয় হেজবোল্লা প্রধান হাসান নাসরাল্লা। এর এক সপ্তাহের মধ্যে নাসরাল্লার তুতো ভাই তথা তার উত্তরসূরি হাশেম সফিউদ্দিনকে লক্ষ্য করে লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেল আভিভ। তবে এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি তাঁর মৃত্যু হয়েছে কিনা।
লেবাননে ইজরায়েলি ফৌজের রক্তক্ষয়ী অভিযানে হেজবোল্লা সদস্যদের পাশাপাশি প্রাণ হারাচ্ছে বহু সাধারণ মানুষ। যুদ্ধের বলি নিষ্পাপ শিশুরাও। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত এই সংঘাতে মৃত্যু হয়েছে ১২৭ জন শিশু ও ২৬১ জন মহিলার। আহতের সংখ্যা বহু। এই মুহূর্তে গাজারই যেন আর এক ছবি ফুটে উঠেছে লেবাননে। হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে আহতের ভিড়ে। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মৃতদেহ। স্বজনহারা কান্নায় বাতাস ভারী। চারদিকে গোলা-বারুদের কান ফাটানো আওয়াজ। প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারা সিরিয়ায় যাচ্ছে। এদিকে, এক বছর পূর্ণ হবে গাজা যুদ্ধের। কিন্তু একইরকম আক্রমণের ঝাঁজ বজায় রেখেছে ইজরায়েল। হামাসকে সমূলে নিধন করতে লাগাতার হামলা চলছে।
সমর বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য বরাবরই বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে। যাতে বিস্ফোরণ ঘটায় গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের বুকে প্যালেস্টাইনের জঙ্গি সংগঠন হামাসের হামলা। যার বদলা নিতে গাজায় যুদ্ধ ঘোষণা করে দেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। প্রায় এক বছর হতে চলল গাজায় ‘ধবংসযজ্ঞ’ চালাচ্ছে তেল আভিভ। এবার সংঘাত শুরু হয়েছে লেবাননে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইহুদি দেশটিতে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে হেজবোল্লা। তাদের যুক্তি ছিল গাজায় হামাসকে সমর্থন জানিয়েই এই আক্রমণ শানানো হচ্ছে। পাশাপাশি লোহিত সাগর উত্তপ্ত করে রেখেছে ইরানের মদতপুষ্ট ইয়েমেনের হাউথিরা। কয়েক মাস আগেই তারা তেল আভিভের মার্কিন দূতাবাসের সামনে ড্রোন হামলা চালায়। সেখানেও ঘটে প্রাণহানি। আর এদের মাথায় রয়েছে ইরান। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এবার ইজরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে তেহরান। ফলে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল গাজায়, তা এবার লেবানন হয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.