২০১৯ সালে পুড়ে যাওয়া নোতর দাম গির্জা। ফাইল ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভক্তির সম্মুখে হার মেনেছিল দুই বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা। চরম বিপত্তিতেও থামেনি নোতর দাম গির্জায় বড়দিনের প্রার্থনা। তবে গত এপ্রিলের অগ্নিকাণ্ডে ছেদ পড়ল দু’শো বছরের প্রথায়। এবার ক্রিসমাসের প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্যারিসের এই বিখ্যাত গির্জা।
জানা গিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বরের রাতে প্রতি বছরের মতো এবার আর আলো জ্বলবে না গির্জার হলে। গত এপ্রিল মাসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে ৮৫৫ বছরের প্রাচীন এই গির্জাটির। যদিও গির্জার রেক্টর প্যাট্রিক শোভে জানিয়েছেন, নোতর দামের ‘আত্মা’কে বাঁচিয়ে রাখতে বড়দিন উপলক্ষে প্রার্থনার আয়োজন করেছেন তাঁরা। এ বারের জমায়েত হবে নোতর দামের এক মাইলের মধ্যে অন্য একটি চার্চে। প্যাট্রিক আরও জানিয়েছেন, নোতর দামের আদলেই উপাসনার জন্য কাঠের মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে সেখানে। ফরাসি বিপ্লবের পরে এই প্রথম বড়দিনের রাতে কোনও প্রার্থনা হবে না গির্জাটিতে। বহু ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও গত দুই শতাব্দীর ইতিহাসে বড়দিনের প্রার্থনা কখনও বন্ধ থাকেনি নোতর দামে। শুধুমাত্র ১৭৯০ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময়ে ক্যাথলিক বিরোধী শক্তির তাণ্ডবে বন্ধ হয়েছিল বড়দিনের জমায়েত।
নোতর দাম অগ্নিকাণ্ড ফ্রান্সের ইতিহাসে অন্যতম দুর্যোগ বলেই গণ্য হচ্ছে৷ ঘটনার পর আবেগতাড়িত হয়ে গির্জাটিকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে বিপুল অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ফরাসি শিল্পপতিরা৷ তবে সেই আশ্বাস ‘কথার কথা’ হয়েই থেকে গিয়েছে৷ বছর শেষ হতে চললেও এখনও পর্যন্ত এক সেন্টও দেননি ধনকুবেররা, অভিযোগ এমনই৷ বরং গির্জার সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন সাধারণ মানুষ৷ বিশেষ করে মার্কিন ও ফরাসি নাগরিকদের একটা বড় অংশ যে যাঁর সামর্থ্যমতো অনুদান দিয়েছেন ‘নোতর দাম চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন’-এ।
১১৬৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা লুইয়ের আমলে শুরু হয়েছিল নোতর দাম গির্জা তৈরির কাজ। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বানানো এই বিশাল ঐতিহ্যমণ্ডিত গির্জাটি প্রকৃত অর্থেই পৃথিবীর স্থাপত্যের ইতিহাসের এক অনিবার্য দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে শতকের পর শতক ধরে বহু বিপদেরও সম্মুখীন হতে হয়েছে ৬৯ মিটার অর্থাৎ ২২৬ ফুট উচ্চতার এই গির্জাকে। ১৭৯০ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় এই গির্জার ভিতরে থাকা বহু স্থাপত্য ও চারুকলা একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ফরাসি ‘গথিক’ স্থাপত্যকীর্তির অন্যতম আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয় এই গির্জাকে। প্রতি বছর অন্তত ১.৩ কোটি মানুষ এই গির্জা দেখতে আসতেন। এখন নোতর দামের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ নতুন করে গড়ে ওঠার অপেক্ষায় অগণিত মানুষ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.