সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ইমরান খানের (Imran Khan)। যা পরিস্থিতি, গদি বাঁচানো কার্যতই অসম্ভব হয়ে পড়েছে পাক (Pakistan) প্রধানমন্ত্রীর। শিগগিরি তাঁকে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখে পড়তে হবে। মনে করা হচ্ছে, আস্থা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়বে ইমরানের সরকার। ইমরানের গদিচ্যুত হওয়ার প্রসঙ্গে বারবারই ফিরে আসছে একটি প্রশ্ন। এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনও প্রধানমন্ত্রীই তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। সেই পথেই কি এগোচ্ছেন ইমরান?
১৯৪৭ সালে জন্ম হয় পাকিস্তানের। শুরু থেকেই নানা টালমাটাল পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে পাক প্রশাসনকে। তবে প্রথম পাক প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান ক্ষমতায় ছিলেন চার বছরেরও বেশি সময়। এরপর থেকেই বারবার বদলাতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। পাঁচের দশকে পাক সংবিধানকে বাতিল করেন দেন রাষ্ট্রপতি ইসকান্দার মির্জা। ১৯৫৮ সালে দেশে জারি হয় মার্শাল ল।
এই ভাবেই চলে ১৩ বছর। এরপর দেশের রাষ্ট্রপতি হন জুলফিকার আলি ভুট্টো। ১৯৭৩ সালে তিনি ইস্তফা দেন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে। এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৭৭ সালে তিনি নির্বাচনে জেতেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জেনারেল জিয়াউল হকের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। কেবল ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়াই নয়, এরপর একটি খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৭৯ সালে সামরিক আদালত তাঁকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়।
১৯৮৮ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় জেনারেল জিয়াউল হক। এরপরই সেদেশের মসনদে বসেন ভুটো কন্যা বেনজির ভুট্টো। কিন্তু তাঁর সরকার টিকেছিল মাত্র ৩ বছর। ১৯৯০ সালে তিনি ইস্তফা দিতে বাধ্য হন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মতান্তরের কারণে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু তাঁকেও পাক সেনার চাপের মুখে ১৯৯৩ সালেই ইস্তফা দিতে হয়।
সেই বছরের নির্বাচনে জিতে যায় বেনজির ভুট্টোর দল। তিনি অবশ্য ভোটে জেতেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বেনজিরই। অচিরেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। ১৯৯৫ সালের ৫ নভেম্বর তাঁর সরকারের পতন হয়।
পরের বছর, ১৯৯৭ সালে শরিফের মুসলিম লিগ ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে পারভেজ মুশারফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের ধাক্কায় সেই সরকারের পতন ঘটে। মুশারফের আমলে তিনজন ‘পুতুল’ প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী ৯ বছর পাকিস্তানের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৮ সালে নতুন প্রধানমন্ত্রী হন ইউসুফ রাজা গিলানি। ২০১২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু হলে তাঁর মেয়াদের বাকি সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান রাজা পারভেজ আশরফ। তবে ইউসুফই পাকিস্তানের ইতিহাসে সবথেকে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ ছিল ৪ বছর ৮৬ দিন।
২০১৩ সালে ফের নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তিনিও পুরো মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারেননি পানামা পেপার্স মামলায়। তাঁর অসমাপ্ত মেয়াদ শেষ করেন শাহিদ খাকান আব্বাসি।
এরপর ২০১৮ সালে ইমরান খান নির্বাচনে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। যত সময় এগিয়েছে ততই দুর্নীতি-সহ নানা অভিযোগে বিদ্ধ হয় ইমরান সরকার। তাঁর আমলে রেকর্ড গড়ে মুদ্রাস্ফীতি। একজোট বাঁধে বিরোধী দলগুলি। অবশেষে ইমরানের বিরুদ্ধে জমা পড়েছে অনাস্থা প্রস্তাব। গত মার্চে আস্থা ভোটে জিতে গেলেও ইমরানের পক্ষে এবার আর গদি বাঁচানো সম্ভব নয় বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদি সেটাই হয়, তাহলে পাক প্রধানমন্ত্রীদের দুর্ভাগ্যের ক্রমিক সারিতে জুড়ে যাবেন তিনিও। যা কেবল সময়ের অপেক্ষা বলেই আপাতত মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.