বৃহস্পতিবার লন্ডনের এক অনুষ্ঠানে রাজনাথ সিং
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনের মুখে মোদি-স্তুতি! সেদেশের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করা হয়েছে। যা নিয়ে সরগরম কুটনৈতিক মহল। কিন্তু হঠাৎ কেন দিল্লির প্রশংসায় পঞ্চমুখ বেজিং? নতুন কোন কৌশল নিয়েছে কমিউনিস্ট দেশটি? উঠেছে এরকম নানা প্রশ্ন। এই প্রেক্ষিতে মুখ খুললেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। সাফ জানালেন, গালওয়ান সংঘর্ষের পর চিন বুঝতে পেরেছে, ভারত দুর্বল দেশ নয়। পাশাপাশি তাঁর বার্তা, ভারতকে চোখ রাঙিয়ে চলে যাওয়া আর সহজ নয়।
ব্রিটেন সফরে গিয়েছিলেন রাজনাথ। বৃহস্পতিবার লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাঁকে গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। যার উত্তরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “গালওয়ান সংঘাতের পরে চিন বুঝতে পেরেছে, ভারত দুর্বল দেশ নয়। ২০২০ সালে দুদেশের মধ্যে একটা সংঘর্ষজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমাদের জওয়ানরা সাহসের সঙ্গে তার মোকাবিলা করেছেন। হয়তো সেই জন্যই ভারত সম্পর্কে চিনের চিন্তাভাবনার বদল ঘটেছে। আন্তর্জাতিক মহল বরবারই মনে করে, চিন ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু আমরা তা ভাবি না। প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক ভালো রাখতে চাই।” এর পর হুঁশিয়ারির সুরে রাজনাথ বলেন, “ভারত শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশকে ভয় দেখানো এখন আর সহজ নয়। ভারতকে চোখ রাঙিয়ে যে কেউ চলে যাবে তা আর হবে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, লন্ডনের মাটি থেকে ফের একবার চিনকে বার্তা দিয়েছেন রাজনাথ। দক্ষিণ চিন সাগরে লালফৌজের আগ্রাসান, নতুন মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশকে নিজের বলে দাবি করা, এরকম একাধিক বিষয়ে যে বেজিংয়ের দাদাগিরি দিল্লি মেনে নেবে না তা আরও একবার স্পষ্ট করলেন তিনি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চিনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ডিরেক্টর ঝাং জিয়াডংয়ের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে জিয়াডং বলেছেন, “মোদি জমানায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে ভারত হয়ে উঠেছে শক্তিশালী দেশ। নয়াদিল্লির অর্থনৈতিক ও বিদেশ নীতিতে পরিবর্তন হয়েছে। দ্রুত এগিয়ে চলেছে মোদির ভারত। হয়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বাড়তে থাকা অর্থনীতি। ভারত ক্রমেই কৌশলগত ভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে এবং ফলে ক্রমেই গুরুত্ব বাড়ছে দেশটির।” জিয়াডং জানিয়েছেন, তিনি সম্প্রতি ভারতে দুবার ঘুরে গিয়েছেন।
বলে রাখা ভালো, ২০২০ সালের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় (Galwan Valley) মুখোমুখি হয় ভারত (India) ও চিনের ফৌজ। দুপক্ষের জওয়ানরাই লোহার রড ও কাঁটাতার জড়ানো হাতিয়ার নিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা লড়াই করেন। রক্তক্ষয়ী সেই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। ১৯৭৫ সালে পর সেবারই প্রথম প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কার্যত যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত করতে কয়েক দফা আলোচনায় বসে দুই দেশের সেনাবাহিনী। তাতে আঁচ কিছুটা কমলেও উত্তেজনা কমেনি। এই অবস্থায় চিনের মুখপত্রে ভারতের এহেন প্রশংসাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.