লিন্ড অ্যান্ডারম্যান (প্রত্যক্ষদর্শী): বেঁচে আছি বিশ্বাস হচ্ছে না৷ ট্রাকের চাকা থেকে বাঁচতে আমরা প্রাণপণে দৌড়চ্ছিলাম৷ শেষে আর পারলাম না৷ বান্ধবী শ্যালিকে হ্যাঁচকা টেনে রাস্তায় গড়িয়ে পড়েছিলাম৷ আমাদের কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল ডান চাকা৷ বাঁদিকের চাকায় পিষে গেল একটু আগেই আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা৷ আমার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না৷
শুয়ে শুয়ে দেখতে পেলাম রক্ত আর মৃতদেহের স্তূপ৷ দৈত্যের মতো ট্রাকটা তখনও ছুটে চলেছে বিচের দিকে৷ পিষে মারছে আতসবাজি আর রিহানার কনসার্ট দেখতে আসা মানুষগুলোকে৷ ট্রাকের ভয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছিল সবাই৷ কেউ কেউ সমুদ্রে ঝাঁপ দিল৷ ফুটপাথেও চাকা তুলে দিয়েছিল ড্রাইভার৷ সেখানেও তাণ্ডব চালাল৷ বাস্তিল দিবস সেলিব্রেট করতে এসে কত লোক যে মুহূর্তের মধ্যে নিথর মাংসপিণ্ডে পরিণত হল, জানি না৷ কানে আসছিল শুধুই কান্না, চিৎকার আর গুলির শব্দ৷ ঘাড় উঁচু করে দেখলাম ট্রাক থেকে নামল চালক৷ হাতে তার বিশাল আগ্নেয়াস্ত্র৷ এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ছিল৷ অবলীলায় বাচ্চাদেরও মারল৷ ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ফের ট্রাকে চেপে ছুটল প্রোম দে অ্যাঙ্গলিসের রাস্তায়৷
পরে জানলাম, পুলিশও ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে৷ চাকায় গুলি লাগতে থেমে যায় ট্রাকটি৷ শ্যালিকে আঁকড়ে ধরে কতক্ষণ শুয়েছিলাম জানি না৷ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের আওয়াজে হুঁশ এল৷ বাস্তিল দিবস, ফ্রান্সের স্বাধীনতা দিবস৷ খুব হইচই হয় এখানে৷ আমি অস্ট্রেলিয়ার মানুষ৷ দীর্ঘদিন এখানে থাকি৷ উৎসবের মেজাজে ভরপুর একটা শহর নিমেষে মৃত্যুপুরী হয়ে গেল! ভাবতেও পারছি না৷ এমন নৃশংস দৃশ্যর সাক্ষী হওয়ার পর বুঝতে পারছি জীবনটা আর স্বাভাবিক নেই৷ না, ঘুমাতে আর পারব না৷ পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় আমরা যখন ফিরছিলাম তখন একটা গোলাপি পুতুল রাস্তায় পড়ে ছিল৷ পাশেই মুখ ঢাকা ছোট্ট একটা মৃতদেহ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.