সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চাকরি, আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ। নোংরা নিয়ে গিয়ে নিউ ইয়র্কের ‘ধাপায়’ ফেলতে হবে। শিক্ষিত মার্কিনদের কাছে এই পেশা বেশ অগৌরবের। অনেকেই নাক সিঁটকেছিলেন। সুযোগটা নিয়েছিলেন দুই ড্রপআউট। ড্রাইভিংয়ে হাত পাকিয়ে চাকরির আবেদন। সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ। দু’জনের বেতন শুনলে চোখ কপালে উঠবে। বছরে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার।
নোয়েল মোলিনা এবং টনি সোনকার। অভিন্নহৃদয় বন্ধু। দু’জনেই স্কুলছুট। প্রায় এক দশক ধরে তারা নিউইয়র্কের সাফাইকর্মী। নোংরার গন্ধেই ওদের যত আনন্দ। পচা মাছ, মৃত ইঁদুর, শুয়োর এবং গরুর দেহ তুলতে তুলতে কয়েকটা বসন্ত কাটিয়ে ফেলেছে দুই বন্ধু। শহর পরিষ্কার রাখতে তাদের ডিউটি শুরু হয় সন্ধে সাতটা থেকে। ভোর চারটে নাগাদ ছুটি মেলে। বর্ষা, কিংবা জমে যাওয়া ঠান্ডা। ওদের এভাবেই কাজ করতে দেখতে অভ্যস্ত নিউইয়র্কবাসী। বাকিরা বাঁকা চোখে দেখলেও দু’জনের কাছে কাজটা সম্মানের। কারণ, পরিশ্রমের ফল হাতে-নাতে মেলে। ৩২ বছরের মোলিনা বলছেন, অন্যদের আবর্জনা, তাঁদের কাছে অর্থযোগ। মোলিনা জঞ্জালকর্মী হলেও ট্রাক চালান। গত বছর এই ট্রাকচালক ১ লক্ষ ১২ হাজার ডলার পকেটে পুরেছেন। তার সঙ্গী টনির রোজগারও মন্দ নয়। খালাসির আয় প্রায় ১ লক্ষ মার্কিন ডলার। প্রতি বছর ওদের রোজগার বাড়ছে। দু’জন একটি ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্মী।
ক্লাস টেনের পর মোলিনা ড্রপ আউটের তালিকায় নাম লেখায়। মোলিনার শুরুতে বেতন ছিল ৮০ হাজার ডলার। টনিও স্কুলছুট। ২০ বছর আগে গায়ানা থেকে আমেরিকায় অভিবাসী হিসাবে সে এসেছিল। তারপর দুজনের বন্ধুত্ব। শুধু এরা নয়, আমেরিকার বেশ কিছু জঞ্জালকর্মীর বাৎসরিক বেতন ৬ অঙ্কের কাছাকাছি। অন্যদের কাছে যা চোখ টাটিয়ে দেওয়ার মতো। কারণ মার্কিন পুরুষদের বছরে গড় আয় ৭২ হাজার ডলার। দেশে অন্য ট্রাকচালকদের বেতন ৪০ হাজারের কাছাকাছি। হাইস্কুল ড্রপআউটরা এধরনের কাজ খোঁজেন। তাদের মাইনে ২৪ হাজার ডলার থেকে শুরু হয়। কলেজ উত্তীর্ণদের থেকেও ভাল এই দু’জনের। ঠিকমতো চালক পাওয়া দুষ্কর আমেরিকায়। এই সুযোগে ড্রাইভিং ভালমতো শিখে এরা এই কাজে নেমে পড়েন। মোটা বেতন আসায় সপ্তাহে ৫৫ থেকে ৬০ ঘণ্টা ডিউটি করতে এরা পিছপা হন না। পরিশ্রমী মোলিনা এবং টনির জন্য বিমা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও করে দিয়েছে তাদের সংস্থা। নিউ ইয়র্কের অভিজাত এলাকায় বাড়ি কিনেছে মোলিনা। টনিও তিন কামরার ফ্ল্যাটের মালিক। আমেরিকায় এই মুহূর্তে প্রায় ৫২ হাজার জঞ্জাল কর্মী রয়েছেন। তবে ঈর্ষণীয় বেতনে মোলিনা এবং টনি এখন আমেরিকায় আলোচনার কেন্দ্রে। পেশা হিসাবে কিছুই যে অসম্মানের নয়, তা নীরবে দেখিয়ে চলেছেন দুই বন্ধু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.