সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছয় মাস পেরিয়ে গিয়েছে। হামাস নিধনে এখনও গাজায় অগ্নিবর্ষণ করছে ইজরায়েলি ফৌজ। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। লক্ষ্য একটাই। হামাস জঙ্গিদের সমূলে বিনাশ করা। আর তার জন্য রাফায় ঢুকে অভিযান শুরু করতেই হবে ইজরায়েলি বাহিনীকে। এমনটাই জানিয়ে এই অভিযানের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করলেন নেতানিয়াহু।
রয়টার্স সূত্রে খবর, রাফায় অভিযান শুরু করা নিয়ে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। দৃঢ় কণ্ঠে তিনি জানিয়েছেন, “রাফায় অভিযান শুরু না করলে এই যুদ্ধে জয় আসবে না। আমরা আমাদের লক্ষপূরণে অবিচল। আমাদের এখন উদ্দেশ্য পণবন্দিদের মুক্ত করে হামাসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা। রাফায় ইজরায়েলি ফৌজের অভিযানের দিনক্ষণ আমি ঠিক করে ফেলেছি। সেই দিন আসছে। ওই শহরে ঢুকে হামাস জঙ্গিদের খতম করবে আমাদের জওয়ানরা। বিশ্বের কোনও শক্তি কোনও বাহিনী আমাদের আটকাতে পারবে না। অনেকেই চাইছে আমাদের আটকাতে কিন্তু কেউ সেটা পারবে না। হামাস যা করেছে তা পুনরাবৃত্তির সুযোগ ওরা আর পাবে না।” তবে ঠিক কবে রাফায় ঢুকবে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সেটা তিনি স্পষ্ট করেননি।
কিন্তু কেন রাফায় ঢুকে আক্রমণ শানাতে এতটা মরিয়া ইজরায়েল? দক্ষিণ গাজায় অবস্থিত রাফা শহরটি মিশর সীমান্তবর্তী। যা এখন প্রায় ১৫ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়দের শেষ আশ্রয়। ইজরায়েলি সেনার হামলা থেকে বাঁচতে এই শহরের বহু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। এই মুহূর্তে ইজরায়েলের মারে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গাজা ভূখণ্ড। উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা এমনকি মাটির নিচেও হামাস জঙ্গিদের ডেরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলি ফৌজ। তেল আভিভের অভিযোগ, এই রাফা শহরেই নতুন করে ঘাঁটি গাড়ছে জেহাদিরা। এখান থেকেই তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তাই হামাসকে পুরোপুরী শেষ করতে হলে এই শহরও তোলপাড় করতে হবে। এদিকে, রাফা সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে মিশর। ফলে শহর ছেড়ে পালানোর আর কোনও পথ নেই হামাসে কাছে। তাই রাফায় একবার ইজরায়েলি বাহিনী পুরোপুরী ঢুকে পড়তে পারলে আর রেহাই পাবে না কোনও হামাস জঙ্গি। কিন্তু সেই শহরে আশ্রয় নেওয়া নিরীহ মানুষদের কী হবে?
গত মাস দুয়েক ধরে রাফায় আছড়ে পড়ছে ইজরায়েলের গোলা-বারুদ। হামলা, অনাহার, রোগব্যাধিতে কার্যত কোনঠাসা হয়ে গিয়েছে শহরটি। গত মার্চ মাসেই রাফায় ইজরায়েলি ফৌজের বোমাবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১১ জন শরণার্থী। রাফায় ইহুদি দেশটির অভিযানের ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আতঙ্কের প্রহর গুনছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এর আগে বেশ কয়েকবার এনিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। রাফায় যাতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন না হয় তা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। গাজার মৃত্যুমিছিল বন্ধ নিয়ে ‘বন্ধুদেশ’কে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। প্রয়োজনে অবস্থান বদল করা হবে বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু তাতেও কোনও পরোয়া নেই নেতানিয়াহুর। নিজের অবস্থানে অনড় থেকেই জানিয়ে দিলেন রাফায় অভিযান হবেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.